ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় বুধবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোস কংগ্রেস সেন্টারে ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে তিনি এ কথা বলেন ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণে কম ভূমিকা রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ দেশকেই বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুব সামান্য হলেও পরিবেশের ক্ষতির কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হচ্ছে, নিঃশব্দে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কৃষক, জেলে ও নারীরা ঝুঁকিতে পড়ছে। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার দিকে ভালোভাবে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। বিশ্ব বাণিজ্য ও গবেষণায় এমন সমাধান বের করতে হবে যাতে জীবন, শস্য, কৃষি ও সম্পদ রক্ষা করা যায়।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের যে সীমা রয়েছে, তা অতিক্রম না করতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কম কার্বন নিঃসরণ করে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছি। আমাদের উৎপাদন খাতকে আমরা গড়ে তুলছি পরিবেশবান্ধব হিসেবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে, যা থেকে দেড় কোটি মানুষ সৌর বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সবচেয়ে বড় জাতিতে পরিণত হবে।
শখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরে অলাভজনক মডেল নেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
নিজস্ব সম্পদ থেকে ২০০৯ সালে ৪০ কোটি ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার কথা আলোচনায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে জলবায়ু সহনীয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা হচ্ছে, যেগুলো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। ধান উৎপাদনে পানির ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার পাশাপাশি সেচ কাজে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্েযাগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অনুসমর্থন জানিয়েছে এই আশা নিয়ে যে, বিশ্ব সম্প্রদায় যৌথ সমৃদ্ধির এই প্রচেষ্টায় তাদের দায়িত্বটুকু পালন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে রক্ষার জন্য প্যারিস চুক্তিকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্থানান্তর, অভিযোজন উন্নয়ন, প্রযুক্তি বিনিময় আজ সমালোচিত। বুদ্ধিভিত্তিক সুরক্ষার অজুহাতে বিশ্ব সুখকর অবস্থানে থাকতে পারে না। স্বল্প উন্নত দেশগুলোকে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ প্রযুক্তি ব্যাংক রয়েছে। কৃষি-স্বাস্থ্যে আমরা জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তিতে যেতে চাই।
প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট গালিভার প্রমুখ।
ধনী ও ক্ষমতাধরদের আলোচনা সভা হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নেতা হিসেবে অংশ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ৪ দিনের এ সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনে অংশ নিচ্ছেন তিনি।