অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ, এ হিসেবেই পরিচালিত হবে দেশ। এদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কেউ কেউ কথা ওঠানোর চেষ্টা করছে।’ সবাইকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এদেশের মাটিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়েই বসবাস করবে।’
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলটির শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠানে ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমূখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশের মাটিতে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকলে একসাথে বাস করবে এবং কারণ মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের লোক রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই বলে অন্য ধর্মাবলন্ধীদের অবহেলার চোখে দেখবো, তা নয়। সবাই সমানভাবে ধর্ম পালন করবে। যার যার ধর্ম পালনে সকলের স্বাধীনতা থাকবে। আমরা সেই চেতনায় বিশ্বাস করি। ইসলামও সেই শিক্ষা আমাদের দিয়ে থাকে।’
দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে বলবো, যে কোনও পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়, সেটাই করতে হবে। কে কী বললো, না বললো, সেগুলো শোনার থেকে আমরা কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম, সেটাই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তাহলে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো, সঠিক কাজ করতে পারবো এবং সেভাবেই আমরা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর মানুষ উপলব্ধি করল সরকার জনগণের সেবক হতে পারে, জনগণের জন্য কাজ করতে পারে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা আবার সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখি।’
আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে কেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে এর ব্যাখ্যা দিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারছি বলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ভিক্ষুক জাতি হিসেবে আমরা থাকতে চাই না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’
এ সময় তিনি জানান, ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। এখন ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, মুজিব বর্ষেই দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সেবাই আওয়ামী লীগের কাজ। করোনাকালেও আমাদের নেতাকর্মীরা মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছে। এতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মী মারাও গেছেন। এ সময় তিনি মারা যাওয়া নেতাকর্মীদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, ‘সংগঠনটাকে শক্তিশালী করতে হবে। পঁচাত্তরের পর যে নামটি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, আজ আপনারা জানেন ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মুজিব বর্ষে এটা বাঙালি জাতির জন্য বড় উপহার।’
করোনা নামক বন্দিত্ব থেকে বিশ্ববাসী মুক্তি পাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশেও ভ্যাকসিন আসার ব্যবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনও হয়েছে। তারপরও সবচেয়ে বড় সুরক্ষা মাস্ক, হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা। ঘোরাঘুরি কম করা। আপনারা সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে চলবেন। আপনাদের সুস্থ থাকা সংগঠন ও দেশের মানুষের জন্য জরুরি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করবো। জাতির পিতার আদর্শ অনুযায়ী আমরা দেশ চালাবো। এই দেশের মানুষ আর কখনও মাথা নত করে চলবে না। মাথা উঁচু করে চলবে।