কুষ্টিয়া থেকে আয়না হক: ‘ আমারও তাই, ভিসির ওই গোলমালের মধ্যে আমরা যাব কেন, এখন তুমি যদি ভিসি হও আমি যদি তোমার আন্ডারে চাকরী করি, তুমি যদি বলো এটা লিখে দাও, তা হলে আমি কি করতি পারি, এটা একটা বাজে কাজ করছে। সেখানে সকলে ডাইকি নিয়ে এইডি লিখি দিয়ে আসতি হবি, না হয় রিজাইনড দিতি হবি, এই হচ্ছে গা অপশন, আরে ভাই,,,, কিলের ভাব দেইখি টের পাচ্ছিস না, তোকে কি করবো। সে তো সরাসরি বলছে না, পরিবেশটা এমন তৈরি করেছে। ‘ তুমি সাংবাদিকদের বলো যে তাদের দিয়ে এটা জোর করে লেইখি নেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ব্যক্তির সাথে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম আলী আহসান এমন আক্ষেপের কথাই বলছিলেন।
গত ৮ জুলাই কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম আলী আহসান ও প্রধান প্রকৌশলী (ভার) আলিমুজ্জামান টুটুল স্বাক্ষরিত গত কয়েক দিনের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে উল্লেখ্য করা হয়েছে, আমরা স্বাক্ষরকারীদ্বয় গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি কয়েকটি পত্রিকায় ‘ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (৩য় পর্যায়ে) প্রথম সংশোধিত” শীর্ষক প্রকল্পের টেন্ডার কাজ নিয়ে হরিলুট চলছে মর্মে সংবাদটি আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। কারণ বর্তমান প্রশাসনের আমলে সমস্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া ইজিপি’র মাধ্যমে ১০০% স্বচ্ছ ও সততার সাথে হয়েছে। এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে অদ্যবধি কোন অভিযোগ উপস্থাপিত হয়নি এবং প্রকল্পের বড় কাজে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন এবং এখন পর্যন্ত কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করেনি। তাই এহেন মিথ্যা সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। প্রসঙ্গত সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পের সমাপ্তি প্রতিবেদন আই.এম.ই.ডি. সন্তোষজনক প্রতিবেদন দাখিল করেছে এবং ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে মর্মে উল্লেখ করেছেন। এমন ভাবে শিক্ষক সংগঠন, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন, সাধারণ কর্মচারীদের সংগঠন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চা প্রয়োগ করে বর্তমান ভিসি তার অনুকুলে প্রশংসা দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ওই সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বেচ্ছায় নয় এক প্রকার ভয়ে-চাপে পড়ে এসব দিচ্ছেন তা প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম আলী আহসানের অডিও কথোপকোথনের মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, নানা কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন উর-রশিদ আসকারী দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এজন্য প্রকৃত অবস্থা ছাপিয়ে নিজের পরিচ্ছন্ন ইমেজ দেখাতে উঠে-পড়ে লেগেছেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার মেয়াদকালে নানা অনিয়মের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এমন সংবাদ প্রকাশের পর থেকে এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। উপাচার্য নিজের পক্ষে সাফাই করে এসব লেখা শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠাবেন বলেও জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাপ দিয়ে তার পক্ষে স্তুতি ও প্রশংসা লিখিত নিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক দিনে শিক্ষক সমিতি, শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম, ভিসিপন্থী শিক্ষদের নিয়ে গঠিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ভিসিপন্থী কর্মকর্তাদের একটি অংশ নিয়ে গঠিত অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, সাধারণ ও সহায়ক কর্মচারী সমিতিসহ কয়েক সংগঠনের কাছ থেকে এ লিখিত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনগুলোর নেতারা এসব কথা বলেছেন। তথ্যমতে, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জাতীয় গণমাধ্যমে বর্তমান প্রশাসনের সময়ে হওয়া অনিয়ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাজীবি সংগঠনগুলোর মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টিতে ভিসি ও তার নিকটজনদের ভুমিকার কথা উঠে আসে। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব সংগঠনের নেতাদের ডেকে এই সংবাদের প্রতিবাদ করা হয়। একইসঙ্গে বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে সংগঠনগুলোকে বিবৃতি দিতে বলেন উপাচার্য। একরকম চাপ দিয়েই তাদের থেকে বিবৃতি নেওয়া হয় বলে সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ভিসি নিজের পক্ষে একটি লিখিত দিতে বলেছেন, তাই বাধ্য হয়ে দিয়েছি। উপাচার্য সবাইকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাপে রেখেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে উপাচার্যের প্রশংসা করে দেওয়া চিঠিগুলোতে দেখা গেছে- প্রতিটি সংগঠনের বিবৃতিতেই প্রায় একই ধরণের কথা বলা হয়েছে। বিবৃতি প্রদান নিয়েও সংগঠনগুলোতে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, শিক্ষক সমিতি ও অন্য কয়েক সংগঠনগুলোর অনেক নেতা এরকম বিবৃতিতে মত না দিলে তাদের উপেক্ষা করেই ভিসিপন্থীরা বিবৃতি প্রদান করে। এক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষর ছাড়াই শুধু (ভিসিপন্থী) সভাপতি প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতি দেওয়া নিয়ে শিক্ষকসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা চলছে। এদিকে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠনটির বিবৃতি দেয়ার কোন বৈধ্যতা নেই দাবী করে কর্মকর্তা নেতারা বলেন, কর্মকর্তাদের একমাত্র সংগঠন হচ্ছে কর্মকর্তা সমিতি। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর কর্মকর্তা সমিতির নির্বাচনে ব্যাপক ভোটে পরাজিত হয়ে ভিসিপন্থি কয়েকজন কর্মকর্তা রাতারাতি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের এই সংগঠনটি গঠন করে, যার কোন বৈধ্যতা নেই। তাছাড়া কেন্দ্রীয় অনুমোদিত কমিটির বিপক্ষে ভিসিপন্থী কিছু শিক্ষক স্বঘোষিত যে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করেছে সেই কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধেও জামায়াত-বিএনপির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। এটি কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ অনুমোদিত কমিটি না হওয়ায় তাদের বিবৃতি দেয়ার কোন বৈধ্যতা নেই বলেও কেন্দ্রীয় অনুমোদিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অনুমোদিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহাবুবুল আরেফিন বলেন, শুনেছি উপাচার্য অনেকের কাছ থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিজের পক্ষে সাফাই করে প্রশংসাপত্র নিচ্ছেন। এসব কর্মকান্ড একজন উপাচার্যের মানায় না। এসব নীতিহীন কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও তলানিতে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এদিকে বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্যাডে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (ভারঃ) এইচ এম আলী হাসান এবং প্রধান প্রকৌশলী (ভারঃ) আলিমুজ্জামান টুটুল যে প্রতিবাদ দিয়েছেন সে প্রতিবাদের বিষয়ে তাঁরা নিজেরাই আবার বিরুপ মন্তব্য করেছেন।