অগ্রসর রিপোর্ট :দুই মাস না যেতেই আবারো আগুনে পুড়ল সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বাংলাদেশের একটি অংশ। ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জ্বলা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের এলাকার আগুন সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্তও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। তবে নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীরা। বেশকিছু এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যাচ্ছিল।
সোমবার বেলা এগারোটা নাগাদ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ি এলাকার ২৪ নম্বার কম্পার্টমেন্টে এই আগুনের ঘটনা ঘটে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে বিকালে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক (সিএফ) মো. মঈনুদ্দিন খান।
বনে কিভাবে আগুন লাগল তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি বনবিভাগ। আগুনের ঘটনা তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নুল আবেদিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বনবিভাগ। আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকার চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়। শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মান্নান এই প্রতিবেদককে বলেন, আগুন লাগার পর বনবিভাগ স্থানীয় গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করে। তারা আগুনের বিস্তৃতি রোধে ফায়ার লাইন কাটা ও পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুপুরের পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট বনের আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। পানির উৎস দূরে হওয়ায় আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বনকর্মকর্তা বলেন, যে এলাকাতে আগুন লেগেছে সেই এলাকায় লতাগুল্ম জাতীয় গাছপালাই বেশি রয়েছে। এই এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। গাছের পাতা পড়ে গাছের নিচেই পাতার স্তুপ তৈরি হয়েছে। এ বছর রৌদ্রের দাবদাহ অনেক। বৃষ্টিপাত নেই। ফলে এই পাতা পড়ে ওই এলাকায় এক ধরনের মিথেন গ্যাসের সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড রোদ্রের তাপে মিথেন গ্যাস থেকে আগুন জ¦লতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এখানে লাগা আগুন একেবারে মাটির নিচ থেকে আস্তে আস্তে বাড়ছে।
বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. মঈনুদ্দিন খান বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে এই প্রতিবেদককে বলেন, সোমবার বিকালে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ি এলাকার ২৪ নম্বার কম্পার্টমেন্টের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা যাচ্ছে। এই আগুন যাতে বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন কেটে দেয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, গ্রামবাসী ও বনবিভাগ যৌথভাবে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি না নিভলেও নিয়ন্ত্রণে আছে। আগুন কিভাবে লাগল তা এখনই বলতে পারছি না। আগুন লাগার কারণ, বনের ক্ষতির পরিমান নিরুপণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এই গঠিত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তি করণীয় ঠিক করা হবে।