ভারত মহাসাগর থেকে অপহরণ করা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অবস্থান করা সোমালি জলদস্যুদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ভূমি থেকে পাওয়া সহযোগিতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে সে দেশের পান্টল্যান্ড পুলিশ। অন্যদিকে এমভি আবদুল্লাহর খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ইইউর যুদ্ধজাহাজ। যেখান থেকে এমভি আবদুল্লাহর ওপর চক্কর কাটছে অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ফলে জাহাজে থাকা জলদস্যুরা এখন উল্টো জিম্মি হয়ে পড়েছে এমভি আবদুল্লাহয়।
ফলে আত্মসমর্পণ ছাড়া জলদস্যুদের আর কোনো উপায় নেই বলেও জানিয়েছে সে দেশের পান্টল্যান্ড পুলিশ। যদিও নিজেদের সুরক্ষায় জিম্মি জাহাজে বিমান বিধ্বংসী কামানের মতো ভারী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা।
সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুউফ বিবিসি সোমালিকে এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এমভি আবদুল্লাহ এখন সে দেশের জিফলের উপকূলীয় এলাকায় আছে।
তিনি বলেন, জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি। যাতে তারা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনো সহযোগিতা না পায়। আমরা এখন তীরে আছি। এছাড়া সমুদ্রের অংশে তারা আন্তর্জাতিক বাহিনীর ঘোরওয়ের মধ্যে আছে। তাই সেদিক থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন। জাহাজ ও ক্রুদের বাঁচাতে যে কোনো অভিযানে অংশ নিতে তারা প্রস্তুত বলে জানান।
পুলিশ কমান্ডার মারদুউফ বিবিসি সোমালিকে আরো বলেন, জাহাজে থাকা জলদস্যুদের হাতে এখন দুটি বিকল্প পথ আছে। হয় তাদের পান্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে কৃতকর্মের জন্য শাস্তি ভোগ করবে। নতুবা বিদেশি বাহিনী এমভি রুয়েন থেকে যেভাবে জলদস্যুদের ধরে নিয়ে গেছে, সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এদিকে সোমালিয়ার উপকূলে ২৩জন নাবিকসহ জিম্মি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য জলদস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের নিয়মিত আলোচনা চলছে। বুধবার (২০ মার্চ) মালিকপক্ষের সাথে সোমালিয়ার জলদস্যুদের যে যোগাযোগ হয় তা অব্যাহত রয়েছে। মালিকপক্ষের সাথে জলদস্যুরা সংযত আচরণ করলেও আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে জানালেন মালিকপক্ষ। ইউ’র জাহাজের অবস্থান কিংবা টহল প্রসঙ্গে মালিক পক্ষ কিছুই জানেন না বলে জানান।
গত বুধবার (২০ মার্চ) দস্যুরা জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরই মূলত নাবিকদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এখন আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমঝোতার কাজ শেষ করে নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে চাইছে মালিকপক্ষ।
জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, নাবিকদের নিরাপদে ফেরাতে তাদের কাজ চলছে। জলদস্যুদের সাথে প্রথম যোগাযোগের দিন বুধবার থেকে মালিকপক্ষের নিয়মিত আলোচনা চলছে। ইউ’র জাহাজের অবস্থান কিংবা টহল প্রসঙ্গে মালিকপক্ষ কিছুই জানে না বলেন তিনি।
তিনি জানান, সামরিক-বেসামরিক কোনো অভিযানে না গিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতায় তারা জিম্মি ২৩নাবিকসহ জাহাজটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে চান। এখন জলদস্যুরা নিয়মিত যোগাযোগ করায় বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করছেন তারা।
অভিজ্ঞ নাবিকেরা জানান, যোগাযোগ শুরু হওয়ায় এখন জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। দর-কষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছালে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি মিলতে পারে। এ ধরনের ঘটনায় সব প্রক্রিয়া শেষ করে নাবিকসহ জাহাজ উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগতে পারে। মালিকপক্ষকে চাপ দিয়ে দাবি আদায় করতে এ সময় নেয় দস্যুরা। এর আগে একই মালিকের জাহান মনি জাহাজ উদ্ধারে ১০০দিন সময় লেগেছিল।