‘একটু বদরাগী, মুখের কথার কোনো লাগাম নেই, কিন্তু মনটা ভালো’, ‘একটু মানিয়ে-গুছিয়ে নিলেই তো হয়!’, ‘ও তো আর গায়ে হাত তোলে না’ মন ভোলানো এমন কথা শোনাই যায়। কিন্তু যে শব্দভেদী বাণ একবার মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, আর মনকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় তা কি ভোলা যায়? না। এ তো এমন ‘লজ্জা’, যা ঘুণ পোকার মতো একটু একটু করে সম্পর্কের শেষ আশাটুকুও সমাপ্ত করে দেয়। ঠিক যেমনটা হয়েছে জয়ার ক্ষেত্রে।
বচেনা চরিত্র জয়া। বাস্তবের সংসার থেকে তাকে ক্যামেরার সামনে তুলে এনেছেন পরিচালক অদিতি রায়। তার সাজানো প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। বাইরে থেকে দেখলে স্বামী পার্থ ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার জয়ার। নতুন বাড়ি হয়েছে, গাড়ি হয়েছে। আবার জয়ার চাকরিতেও কোনো আপত্তি নেই শ্বশুরবাড়ির। এমন সুখ কটা মেয়ের কপালে থাকে?
তাহলে সমস্যা কোথায়? ঠিক এই প্রশ্নের মুখেই বারবার পড়তে হয়েছে মুখচোরা জয়াকে। কারও মুখের উপর কথা বলতে পারে না সে। কিন্তু সবার কথা সহ্য করা যেন তার নিয়তি হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে স্বামী পার্থর কথা। তা শূলের মতো বিঁধে যায় জয়ার শরীরে, মনে। সহ্যের সমস্ত সীমা পেরিয়ে যায়। মেয়েও মায়ের সঙ্গে থাকতে চায় না। তাহলে কি জয়া ভালো মা হতে পারেনি? আবার প্রশ্ন। বেহায়া প্রশ্নগুলো প্রতিবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জানতে চায় লজ্জা কার? যে কুকথা বলে বা গালিগালাজ করে তার, নাকি যে মুখ বুঝে সব সহ্য করতে থাকে তার?
শারীরিক হেনস্তা, নিগ্রহ নিয়ে কথা হয়, আলোচনাও হয়। কিন্তু মৌখিক হেনস্তা বা ভার্বাল অ্যাবিউজের মতো বিষয়ও আমাদের চোখের সামনে ঘটে। অনেক সময় অজান্তেই। যুক্তি দিয়ে আবার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও চলতে থাকে। এমন একটা বিষয়কে বাংলা ওয়েব সিরিজে তুলে ধরার জন্য অদিতি রায় ও গবেষক সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধুবাদ প্রাপ্য। প্রিয়াঙ্কা জয়ার অসহায়তা ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বলতে গেলে সিরিজের ছটি এপিসোডের দায়িত্ব তারই কাঁধে।
জয়ার স্বামী পার্থর চরিত্রে অনুজয় চট্টোপাধ্যায় বিরক্তিকরভাবে ভালো। নিজের বাচনভঙ্গি ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে একাধিকবার অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন। আইনজীবীর চরিত্রে সাবলীল ইন্দ্রাশিস রায়। খেয়ালি দস্তিদার, শাঁওলি চট্টোপাধ্যায় ও স্নেহা চট্টোপাধ্যায়রা পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করেছেন।
সিরিজের যে ছয়টি এপিসোড প্রকাশ্যে এসেছে, তা ভূমিকা মাত্র। ফলে গৌরচন্দ্রিকার প্রাধান্য রয়েছে। এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে যেতে কয়েকটি জায়গায় যেন একটু খেই হারিয়েছে। তবে আশা করা যায়, পরবর্তী এপিসোডে গল্প নতুন দিকে মোড় নেবে। কারণ, এবার জয়ার লড়াই বেশ কঠিন।