খুলনা প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত এবং অতি উচ্চতার জোয়ারে তা ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ায় খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার অসংখ্য বাসিন্দা ঘর-জমি-কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আম্পানের পর থেকেই চলছে তাদের টানা দুর্দশা। এরই মধ্যে বাপ-দাদার ভিটা ও এলাকা ছেড়েছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে জোয়ারের এই অতি উচ্চতা। জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার একটি কারণ। তবে, আরও কারণ আছে। দেশের উপকূলভাগে, বিশেষত পশ্চিম উপকূলে পলি অবক্ষেপণের মাত্রা অনেক বেশি। এতে নদীর গভীরতা কমছে, চর তৈরি হচ্ছে, নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় প্লাবনভূমি নিচু হচ্ছে। নদীর বেড়িবাঁধের কারণে এতোদিন জোয়ারের তীব্রতা চোখে পড়ত না। যা এখন লক্ষ্য করা গেছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আখতারুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত স্থানগুলোতে অস্থায়ী রিংবাঁধ দেওয়া হলেও এখনও পানির নিচে গ্রামের পর গ্রাম। এতে সীমাহীন দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এ জনপদের মানুষ। ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক অবস্থা। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তো রয়েছেই।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে গৃহহীন পরিবারগুলো উপজেলার হরিণখোলা ও ২ নম্বর কয়রার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু আম্পানে একেবারেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন তারা। মাসখানেক আগে জোয়ারের ধাক্কায় নদী তীরবর্তী ওই এলাকার দুই শতাধিক মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন।
আখতারুল ইসলাম আরও বলেন, আম্পানের পর এসব পরিবার স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত রিংবাঁধের বাইরে পড়ে যাওয়ায় নতুন করে ঘর তুলতে পারেনি। যে কারণে বাধ্য হয়ে ওই এলাকার ৫০টির মতো পরিবার এলাকা ছেড়েছে। তারা কোথায় গেছে এবং তাদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। তবে বেশিরভাগ পরিবারই কাছাকাছি এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো দুর্গত পরিবার এলাকা ছাড়ছে কি না আমার জানা নেই।’
২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল এবং সর্বশেষ গত ২০ মে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পান।
আম্পানের তাÐবে উপকূলীয় এলাকায় ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ লÐভÐ হয়ে যায়।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি জানান, সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের মানুষ এক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন নামে ফের আঘাত হানছে আরেক প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘুর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছেন অনেক মানুষ। এখনও কেউ কেউ এলাকা ছাড়ার কথা ভাবছেন।
আম্পানের পর টিকে থাকতে মানুষ অনেক জায়গায় স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনমাস পরই গত ২০ আগস্টের তীব্রজোয়ারে উপজেলার ২১টিরও বেশি স্থানে বাঁধ আবারও ভেঙে যায়। আবারও মানুষ নিরুপায় হয়ে রিংবাঁধ দিয়েছেন। কিন্তু টিকে থাকা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।
কয়রা এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার আওতাধীন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার ইতোমধ্যে অনেক স্থানের বেড়িবাঁধ ধস আটকানো গেছে দাবি করে বলেন, কয়রার ১৪/১ ও ১৪/২ পোল্ডারের দুটি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে ১৪/১ পোল্ডারের প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে গেছে। এখন একনেকে পাস হলে কাজ শুরুর বিষয়ে বলা যাবে।
কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাশিরহাটখোলা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙন এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে আটকাতে পারলেও আতঙ্ক কাটেনি।
হাটখোলার বেড়িবাঁধে কুঁড়েঘরে বসবাসরত সুচিত্রা সরকার, মনোরঞ্জন সরকার, মনোহর গাইন, আবুল মোড়লসহ স্থানীয়রা জানান, বসবাসের ঘর-বাড়ি নেই, বড় কষ্টে ওয়াপদার বেড়িবাঁধের ওপর কুঁড়েঘর বেঁধে থাকতে হচ্ছে। তিনবেলা দুমুঠো খাবার জোটে না। একবেলা খেলে দুইবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের অনেকেই কাজের সন্ধানে শহরে গেছেন।
ওই এলাকার শিউলি সরদার বলেন, ‘রাতে ঘুমাতে পারি না। যদি ভাঙনে ভাসিয়ে নেয়, সে কারণে জেগে বসে থাকি। কাজ নেই, আয় নেই, খাওয়ার সংস্থান নেই। ভাঙনে ভিটে-মাটিটুকুও চলে যাচ্ছে। এখন আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের পূর্ব হাজতখালী গ্রামের সাবেক মেম্বার মোড়ল শওকত হোসেন মনে করেন, আম্পান পরবর্তী তিনমাসের মধ্যে ভাঙা বাঁধের স্থানগুলো যদি যথাযথভাবে মেরামত করা যেত, তবে আবারও মানুষ দুর্ভোগে পড়তেন না। ঘর-বাড়ি, জমি-কাজ সব হারিয়ে পথে বসা মানুষগুলোর অনেকেই এখন এলাকা ছাড়ার কথা ভাবছেন।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের খবর নেয় না।’
এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন, লবণ পানিতে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে রয়েছে। এলাকার মানুষের অভাব-অনটনেই দিন কাটছে।
কাশিরহাটখোলা খেয়াঘাট থেকে বেদকাশি গ্রামের সড়কটির বামপাশে মরে গেছে খেঁজুরগাছ, তালগাছ, সিরিশগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কয়েকটি বাড়ির মধ্যে গাছে পাতা নেই, আছে শুধু শুকনো ডালপালা।
বেদকাশী গ্রামের ব্যবসায়ী পলাশ আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে লবণপানিবন্দি থাকায় অনেক গাছপালা মরে গেছে। পানি না নামায় গাছ বাঁচানোর কোনো উপায় নেই।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান জিএম শামছুর রহমান জানান, জাইকা ও বিশ্বব্যাংকের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনেকবার সভা-সেমিনার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু কবে নাগাদ টেকসই বাঁধ নির্মিত হবে, তার কোনো হদিস নেই।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বহু প্রতিশ্রæতির পরও টেকসই বেড়িবাঁধ আজও হয়নি। এ জনপদের মানুষ এখন সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ এলাকাও ছাড়ছেন।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, এগারো বছর ধরে আটকে আছে কয়রার টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ। যে কারণে জনপদের মানুষ এখন সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার নতুন করে প্রকল্প নিয়েছে। মেরামত সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ এখনো আসেনি।
সংসদ সদস্য শেখ মো. আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রা এলাকার কর্মহীন পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দ্রæত বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে ।
সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, উপকূলের মানুষের নানা ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে উপকূলের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে।
প্রকৃতির এমন আচরণের জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ি করে তিনি বলেন, প্রকৃতিকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহারে অনেক সভ্যতার পতন হয়েছে, আবার অনেক সভ্যতা টিকে আছে মূলত পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে।
যাদের কারণে পরিবেশ দুষণ বাড়ছে, সেসব দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের তাগিদ দেন তিনি। একইসঙ্গে উপকূলে দ্রæত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
খোলপেটুয়া নদীর পূর্বপারে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতানগর ইউনিয়নের প্রতাপনগর গ্রাম আরেকটি দুর্যোগকবলিত জনপদ। সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী খেয়াঘাট থেকে ট্রলারে গেলে পানিতে ভাসা গ্রামটির হাওলাদারপাড়া চোখে পড়ে।
যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে কোথাও একটি চালা, কোথাও বাঁশের খুঁটি, কোথাও সিমেন্ট-বালুর খুঁটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নদীতীর রক্ষাবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানির তলায় থাকা চিংড়িঘের এলাকা পার করে গ্রামের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে দেখা মেলে শূন্যভিটার সারির। কোনো ভিটায় বাড়ি আছে, মানুষ নেই। আর কোনো কোনো ভিটায় বাড়িও নেই।
প্রতিবেশীরা জানান, উঁচু জোয়ারের পানিতে সব হারিয়ে, থাকা-খাওয়ার অনিশ্চয়তায় পড়া পরিবারগুলো নিজেদের ভিটা-মাটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, গত ২০ আগস্ট কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানির স্রোতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গোটা ইউনিয়ন। নিরুপায় হয়ে গ্রামবাসী বাঁশ ও মাটির বস্তা ফেলে বিকল্প রিংবাঁধ দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
দুর্গত মানুষ নিজেদের ভিটা-মাটি ছেড়ে যাচ্ছেন, কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, কেউ কেউ চলে গেছেন।
হাওলাদারপাড়ার মুনসুর আলী হাওলাদার (৬৫) বলেন, এখন পানি একটু কমছে। তবে পানি একেবারে শুকিয়ে যাবে না।
হাওলাদাররা আনুমানিক ছয় পুরুষ আগে বাদা কেটে এখানে বসতি গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমানে এখানে বাস করা যাচ্ছে না, থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। যে কারণে হাওলাদারপাড়া থেকে তমেজ হাওলাদার, রহিম বক্স, শেফা হাওলাদার, সফেদ আলী হাওলাদার, জাহেদ আলী হাওলাদার, রেশাদ হাওলাদার, লালু হাওলাদার, আজিজ হাওলাদারের পরিবারসহ ২০-২২টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। বেশিরভাগ পরিবারই পাশের এলাকার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে গেছে বলেও জানান মুনসুর আলী হাওলাদার।
এ পাড়ারই আরেক বাসিন্দা শামসুল হাওলাদার বলেন, ‘এলাকার চেয়ারম্যানের দেওয়া সামান্য কিছু ত্রাণ পেয়েছি। তবে আমরা খুবই আতঙ্কিত। পূর্ণিমা-অমাবস্যায় পানি এভাবে বাড়তে থাকলে ভিটামাটি যা টিকে আছে, তাও আর থাকবে না। তখন হয়তো আর এখানে বাস করতে পারবো না।’
সম্প্রতি এ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মোতাহার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সকল বেড়িবাঁধের সংস্কার প্রকল্পের দুই হাজার কোটি টাকার কাজ শিগগিরই শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নদীর বাঁধভাঙন এলাকা ও বাঁধ নির্মাণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তার নির্দেশনায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে নদীপাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বাঁধকে টেকসই করতে বেড়িবাঁধে বনায়ন ও নদী সংলগ্ন খালগুলো খনন করে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা সহজ করে জলাবদ্ধতা দুর করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশির দশকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন শুরু হয় ব্যাপকভাবে। এজন্য বাঁধ কেটে লবণপানি ভেতরে ঢোকানো হয়। এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ব্যবসায়ীরা উপকূলীয় এলাকায় এসে চিংড়ি চাষ বাড়াতে থাকেন। এর ফলে চিরসবুজ প্রকৃতি অল্প সময়ের মধ্যে লবণজলের প্রভাবে বৃক্ষহীন ধূসর প্রান্তরে পরিণত হয়। একইসঙ্গে উপকূলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগও বেড়েছে।
কিন্তু প্রকৃতির এ পরিবর্তন আমলে না নিয়ে সেখানে একের পর এক বড় উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো নির্মাণ চলছে, যা দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বড় অংশকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, উপকূলে জোয়ারের তীব্রতা আগে থেকেই ছিল। অতি জোয়ার ও নোনাপানি ঠেকাতেই তো ইপি-ওয়াপদা (ইস্ট পাকিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) সিইপির (কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্ট) আওতায় পোল্ডার ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তাতে নদীর দুই তীর বরাবর মাটির বাঁধ দেওয়া হয় আর প্লাবনভূমির পানি নিষ্কাশনে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের কারণেই জোয়ারের চাপ বোঝা যেত না। এখন বাঁধ ভেঙেছে, তাই জোয়ারের তোড় বোঝা যাচ্ছে।
অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে ওই প্রকল্পে আমাদের জোয়ারের নদীগুলোর বিপুল পরিমাণ পলির বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখনও বিবেচনা করছে না।