চকচকে ঝলমলে চুল শুধু দেখতেই ভালোলাগে না, এটা চুলের স্বাস্থ্যকর মাত্রাও নির্দেশ করে।
তবে গোসল, নানান ধরনের পণ্য ব্যবহার, দূষণ- চুলের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে কেশ হয় নির্জিব।
আর এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে রয়েছে নানান উপায়।
কন্ডিশনারের পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধোয়া
“চুলের বাইরের আবরণ বা কিউটিকলস অনেকটা টাইলসের মতো কাজ করে। মানে চুলে চকচকেভাব বজায় রাখে। যত বড় হয় চুল ততই অসমান ও কোঁকড়া হতে থাকে। আর আলো শোষিত হওয়ার কারণে চুলে পড়ে মলিন ভাব। এই সমস্যা কাটাতে ব্যবহার করতে হয় ঠাণ্ডা পানি”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন লন্ডনের পেশাদার কেশসজ্জাকর টিনা আউটেন।
ঠাণ্ডা পানি চুলের বাহ্যিক আবরণ বা ‘কিউটিকলস’ বুজে দেয়। ফলে চুলের অগ্রভাগ থাকে মসৃণ। যে কারণে চকচকেভাব আসে।
ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের কেশসজ্জাকর মার্ক টাউনসেন্ড একই প্রতিবেদনে, প্রথমে কুসুম গরম পানি দিয়ে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “গরম পানির কারণে কিউটিকেলস খুলে গিয়ে কিন্ডশনারে থাকা পুষ্টি উপাদান চুলে ভালো মতো শোষিত হবে। তারপর ঠাণ্ডা পানিতে ধোয়ার ফলে কিউটিকলস হবে বন্ধ। ফলে পুষ্টি উপাদান চুলে আটকা পড়বে। এতে চুলে আলো প্রতিফলিত হয়ে চকচকে ভাব দেখাবে।”
লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহার
গোসলে বেশি ভারী বা দুবার কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। ভারী কন্ডিশনার অনেক সময় চুলে মলিনভাব নিয়ে আসে।
টাউনসেন্ড বলেন, “দুবার কন্ডিশনার ব্যবহার করা অপচয়। যদি মনে হয় চুলে বাড়তি আর্দ্রতা প্রয়োজন তবে গোসলের পর ‘লিভ-ইন’ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উপকারী।
যেমন- গোসলের পর চুলে তেল, সেরাম, মিস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা।
ত্বক উপযোগী উপাদান ব্যবহার
“এই সময়ে চুলের যত্ন নিতে মাথার ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই মুখের জন্য উপযোগী উপাদানও মাথার ত্বকে ভালো কাজ করে”- বলেন ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক সেলিব্রেটি কেশসজ্জাকর ক্লারিস রুবেনস্টেইন।
যেমন- হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ স্পা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বা হায়ালুরনিক সেরাম চুল উজ্জ্বল করতে ভূমিকা রাখে।
শুষ্ক চুলে শিয়াবাটার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা উপকারী। এছাড়া বায়োটিন, কোলাজেন, ভিটামিন বি সমৃদ্ধ পণ্য চুলের ও মাথার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।
ক্ষতিকর উপকরণ এড়ানো
শ্যাম্পু, কন্ডিশনার বা চুলের জন্য যে কোনো পণ্য কেনার সময় উপকরণের তালিকা পড়ার পরামর্শ দেন, লাস ভেগাস ভিত্তিক কেশসজ্জার প্রতিষ্ঠান ‘ফিনিক্স স্যালন সুইটস’য়ের কেশসজ্জাকর জিনা রিভেরা।
যেসব পণ্যে সালফেট থাকে, সেগুলো চুল রুক্ষ ও মলিন করে দেয়।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার দিয়ে চুল ধোয়া
নানান কারণে চুলের কিউটিকলস’য়ে ময়লা জমে। ফলে পুষ্টি উপাদান শোষিত হতে না পেরে চুলে দেখা দেয় মলিন-ভাব।
চুল নির্জিব লাগলে, কয়েক দফা অ্যপল সাইডার ভিনিগার দিয়ে চুল ধোয়ার পরমর্শ দেন, রুবেনস্টেইন।
“এর ফলে জমে থাকা ময়লা চুল থেকে পরিষ্কার হবে ভালো মতো”- বলেন তিনি।
তেল ব্যবহার
টাউনসেন্ড বলেন, “যখন চুলের আগা ফেঁটে যায় তখন দেখতে বেশি মলিন লাগে। ভালোভাবে আর্দ্র রাখার জন্য কুসুম গরম তেল চুলে ব্যবহার করা উপকারী।”
সপ্তাহে কয়েকবার চুলের আগা-গোড়া ও মাথার ত্বকে তেল মালিশ করলে কেশে উজ্জ্বলভাব আনতে সাহায্য করে।
মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার
রাতের পরিচর্জার রুটিনে নিয়মিত মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পরামর্শ দেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া’তে অবস্থিত ‘স্যালন ডিজেন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া এলিজাবেথ।
এর ফলে মাথার ত্বকে থাকা ‘সিবেইশাস’ গ্রন্থি উদ্দীপ্ত হয়ে প্রাকৃতিক তেল বেশি নিঃসরণ ঘটে। যে কারণে মাথার ত্বক তৈলাক্ত থাকে আর চুলে আসে চকচকে-ভাব।
চুল ও মাথার ত্বকের গঠন একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হলেও দিনে একবার মাথা থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত মোটা ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ানো উপকারী।
চুলে গাঢ় রং করা
আউটেন’য়ের মতে, “চুলে কালো রং করলে বেশি আলো প্রতিফলিত হয়। যে কারণে চুল দেখতে চকচকে লাগে।”
সিল্কের বালিশের ওয়াড় ব্যবহার করা
এলিজাবেথ বলেন, “বিউটি স্লিপ’ বলে কোনো কথা নেই। বিছানায় শুলেই আমরা গড়াগড়ি দেই। বালিশে সিল্কের আবরণ ব্যবহার করলে চুলে ঘর্ষণ কম হয়। যে কারণে জটপাকে কম। ফলে চুলে মসৃণ-উজ্জ্বলভাবটা বজায় থাকে।”