ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রস্তুতিতে রেলপথ, নৌপথ ও সড়ক পথে ঈদ যাত্রায় কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তিতে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।
সাপ্তাহিক ছুটি ও নববর্ষসহ এবার ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে দীর্ষ ছুটির কারণে পর্যায়ক্রমে মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। ফলে রাজধানীর ট্রেন স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী চাপ কিছুটা কম থাকলেও আজ থেকে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের চাপ একটু বেড়েছে। তবে সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকলেও তেমন কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি। ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন।
এবার কোন ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়নি। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে বেশিরভাগ ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। স্বাচ্ছ্যন্দেই গন্তব্যে ফিরছেন ট্রেনযাত্রীরা। সড়কপথও অনেকটাই স্বাভাবিক। ফেরিঘাটগুলোতে বাড়তি গাড়ির চাপ থাকলেও দুর্ভোগে পড়তে হয়নি ঘরমুখো মানুষের। বাস ও লঞ্চেও অনেকটা নির্বিঘেœ ঘরে ফিরেছেন সাধারণ যাত্রীরা। সবাই নিজেদের মতো করেই বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ গণপরিবহণে। কেউবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রাইভেটকার বা মাইক্রোতে নাড়ির টানে ছুটছেন বাড়ির দিকে। কেউ কেউ নিজের মোটরসাইকেল নিয়েই ছুটে যাচ্ছেন বাড়ির পথে।
ঈদযাত্রায় এবার রেল স্টেশনে আগের মতো ভিড় নেই। টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রী ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। স্টেশনের গেটে মেশিনে টিকেট চেক করে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে যাত্রীদের। অনলাইনে যারা টিকেট কেটেছেন তারাই ভেতরে প্রবেশ করছেন। অনলাইনে টিকেট কাটার কারণে স্টেশনে টিকেট কালোবাজারীদেরও তেমন দেখা যায়নি।
ট্রেন যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্র্যাভেলিং টিকেট এক্সামিনাররা (টিটিই) অবস্থান করছেন। তারা যাত্রীদের টিকেট চেক করছেন। টিকেটে সমস্যা হলে প্রবেশমুখ থেকেই তাদের তারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিকিট কালোবাজারী রোধে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ টি বলে তিনি জানান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, গত বছরের ন্যায় এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। সড়কে গাড়ি চাপ আছে, তবে যানজট নেই বলে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এবার মহাসড়কগুলোর অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো। বর্তমানে দেশের সড়ক পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। আন্তঃজেলা সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো। সারা দেশে অসংখ্য বাইপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ হয়েছে। মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ মোড় সংস্কারের পর সোজা হয়েছে। অধিক যানবাহন চলাচলের মহাসড়কের মাঝখানে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রয়োজনীয় গতিনিয়ন্ত্রক সাইনবোর্ড ব্যবহার করেছে। এসব কারণে মহাসড়কগুলোয় যানবাহনের গতি বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি কমেছে। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশ সোচ্চার রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে দিনে-রাতে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতু এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় যানজট লাগতে পারে, সেটি চিহ্নিত করে বাড়তি হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েসহ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায়।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় সাতটি টোল বুথে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি করে যানবাহনে টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে মোটরসাইকেলের উপচে পড়া ভিড় থাকায় আলাদা দুটি লেন তৈরি করে টোল আদায় করা হচ্ছে। ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২-এর (এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক) আওতায় নির্মিত পাঁচটি উড়ালসড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চের যাত্রী কমেছে। তবে ঈদের সময়ে যাত্রী বেড়েছে লঞ্চে। নৌপথে ঈদ যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে লঞ্চের কেবিনের চাহিদা বেশি। ডেকে তুলনামূলক যাত্রী কম। যাত্রী বাড়তে থাকায় লঞ্চের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।