বগুড়ার ব্যারিস্টার একেএম তাকিউর রহমান গত বছরের ৪ এপ্রিল স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ওমরাহ হজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়েন। তার স্ত্রীর নাম রিদিতা রাহেলা ও মেয়ে’র নাম রুমাইশা। তিনি বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকায় ব্যবসায়ী আবদুল খালেক ছেলে। তাদের কোনও না পেয়ে তার বাবা গত বছরের ৯ জুন ঢাকার কলাবাগান থানায় ডিজি করেন।
এর ৩ থেকে ৪ মাস পর তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে জানান তারা ভালো আছেন। ভালো জায়গায় আছেন। এরপর আর তাদের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
বগুড়া শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল খালেক জানান, তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে একেএম তাকিউর রহমান সবার বড়। ১৯৯৬ সালের দিকে ছেলেকে ভারতের দার্জিলিং-এ একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি করেন। ২০০৪ সালে সেখান থেকে ‘ও লেভেল’ এবং ২০০৬ সালে ঢাকার লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে ‘এ লেভেল’ পাশ করেন। এরপর তাকে লন্ডনের ক্যানটারবেরি ক্যান্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন ২০০৯ সালে। পরের বছর লন্ডন থেকেই বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) শেষ করেন। বাধ্যতামূলক ইন্টার্নি শেষে ২০১১ সালের প্রথম দিকে দেশে ফিরেন। এরপর থেকে হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের পাশাপাশি লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ ও ভুঁইয়া একাডেমিসহ ৪-৫টি প্রতিষ্ঠানে আইন বিষয়ে শিক্ষকতা করতেন। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজের পছন্দে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ ইকবালের মেয়ে রিদিতা রাহেলাকে বিয়ে করেন। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার কলাবাগানের বসির উদ্দিন রোডের ১৪, লেকসার্কাসে একটি ফ্লাটে (৮/বি) বসবাস করতে থাকেন। তিনি বগুড়ার বাড়িতে খুব কম আসতেন। হাইকোর্টে প্র্যাকটিস, টিউশনি ও শিক্ষকতা করে মাসে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করতেন বলে তার পরিবারের সবাইকে জানিয়েছেন। আবদুল খালেক ছেলের বিয়ের পর কখনও বেয়াই বাড়িতে যাননি। তাকিউর হঠাৎ করেই দাঁড়ি রাখা আরম্ভ করে এবং ধর্মীয় কাজে উৎসাহি হন।
আবদুল খালেক আরও জানান, গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে তাকিউর ফোনে তাকে জানান, স্ত্রী রিদিতা রাহেলা ও দেড় বছর বয়সী মেয়ে রুমাইশাকে নিয়ে ওমরাহ হজ পালন করতে যাবেন। ভালো মোয়াল্লিম পেয়েছেন এবং খরচও কম হবে। ৪ এপ্রিল স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তাকিউর হজে যায়। ১৩ এপ্রিল ফোনে আত্মীয়-স্বজনকে জানান, তারা সৌদি আরবে আছেন। ওমরাহ শেষ হলে ২২ এপ্রিল দেশে ফিরবেন। কিন্তু তারা ওই তারিখে দেশে না ফিরায় তিনি ছেলের কোনও বিপদ হয়েছে ভেবে থানায় জিডি করতে যান। কিন্তু ধানমণ্ডি ও কলাবাগান থানা তাকে বার বার ফিরিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি বেয়াই কর্নেল (অব.) ইকবালের সহযোগিতায় কলাবাগান থানায় জিডি করেন। এদিকে জিডি করার ৩-৪ মাস পর তাকিউর অজ্ঞাত নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে বলেন, তারা ভাল আছেন। এ ভাবে অজ্ঞাত ফোন নম্বর ও দেশ থেকে ৩-৪ বার ফোন দেয় তাকিউর। এরপর আর শ্বশুরবাড়ি বা বাবা-মাকে ফোন দেননি। তার বিশ্বাস ছেলে, বউমা ও নাতনি তুরস্ক কিংবা সিরিয়ায় আছে।
এদিকে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে মর্মান্তিক ঘটনার পর ব্যবসায়ী আবদুল খালেকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তিনি প্রায় ২০ দিন আগে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিজিএফআই) তার ছেলের নিখোঁজের কথা জানান। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য ও ছেলের ছবি দেন। আবদুল খালেক ও স্বজনরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তার মেধাবী ছেলে তাকিউর আইএস বা অন্য কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘৯ ব্যক্তির সন্ধানে আইন-শৃংখলা বাহিনী’ এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া পর তকিউরের ছবি দেখে স্বজন ও এলাকাবাসীরা তাকে চিনতে পারে।