খুলনা প্রতিনিধি- নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গত ১৭ মে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, জুনের মধ্যে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে জাহাজ চলাচল করবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে খননকাজ শেষ না হওয়ায় নৌপথটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ শ্যালা নদী দিয়ে নৌ-চলাচল করছে। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অবশ্য বলছে, বর্তমানে আংশিকভাবে ওই পথে নৌযান চলছে। চলতি মাসে খননকাজ শেষ হলে চ্যানেলটি পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএ খুলনা সূত্র জানায়, মংলা বন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার দূরত্ব কমাতে ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার কৃত্রিম পথ খনন করে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘মংলা-ঘষিয়াখালী’ নৌপথটি চালু করা হয়। এটি ‘বাংলাদেশ-ভারত’ নৌ প্রটোকলভুক্ত এবং বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিটের প্রধান অংশ। চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট থেকে খুলনা, নোয়াপাড়া, আংটিহারা হয়ে ভারতগামী পণ্যবাহী জাহাজ এ পথ দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া মংলা সমুদ্রবন্দর ও খুলনার সঙ্গে দেশের অন্য জেলার নৌ যোগাযোগের একমাত্র পথও এটি।
সূত্র আরো জানায়, দীর্ঘদিন খনন না করায় ২০১০ সাল থেকে এ পথে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এ সময় নদীর তলদেশে পলি জমে চ্যানেলের ২২ কিলোমিটার নাব্যতা হারায়। সমস্যা সমাধানে ২০১০ সালের মে মাসে বিআইডব্লিউটিএ প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চ্যানেলে খনন শুরু করে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় ১৫ দিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালের ২৮ মার্চ ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আবার খননকাজ শুরু হয়। সেবারো ফল না আসায় এক মাসের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন খুলনা, মংলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের বিকল্প পথ হিসেবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল শুরু করে। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়ে। সর্বশেষ গত বছরের ২২ মে তৃতীয়বারের মতো প্রায় ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক কোটি ঘনমিটার পলি অপসারণের লক্ষ্যে খননকাজ শুরু হয়। এর মধ্যে চায়না হারবার ৩২ লাখ ঘনমিটার, বসুন্ধরা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড ১২ লাখ ও এসএফ রহমান কোম্পানি ১২ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করবে। বাকি ৪৬ লাখ ঘনমিটার অপসারণ করবে বিআইডব্লিউটিএ। খননকাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি চ্যানেল ঘুরে দেখা গেছে, নয়টি খনন যন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে একযোগে খননকাজ চালানো হচ্ছে। একদিকে চলছে খননের কাজ, অন্যদিকে জোয়ারের পানিতে বিপুল পরিমাণ পলি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। ফলে চ্যানেলে মাত্র সাত থেকে আট ফুট গভীরতার জাহাজ চলাচল করতে পারছে। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসের রিভার ডেল্টা অ্যান্ড কোস্টাল মরফোলজি ডিভিশনের বিশেষজ্ঞ এটিএম কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে আমরা সরকারকে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন করলে এ চ্যানেল দিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এইচ মো. ফরহাদুজ্জামান বলেন, খননকাজ দ্রুত শেষ করে চ্যানেল চালুর আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু খননকৃত স্থানে নতুন করে পলি জমায় কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা চ্যানেলটির আংশিক খুলে দিয়েছি। আশা করছি, এ মাসের শেষ নাগাদ খননকাজ শেষ করতে পারব।