
উল্লেখ্য, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গাইবাবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন সুন্দরগঞ্জের নিজ বাসভবনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রংপুর বিভাগের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমামসহ সকল শ্রেনী পেশার জনগণকে জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে বলেন,‘ আমাদের সর্বস্তরের জনগণ সকলের কাছে আমার একটাই আহবান থাকবে- বাংলার মাটিতে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান যেন না হয়।’
এর আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে ‘ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’র ভবন (দশ তলা) এবং ১০০০ আসনের ‘শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ’এর (দশ তলা) ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী ।
ভিডিও কনফরেন্সে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ রংপুর বিভাগের সংসদ সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, টিপু মন্সি, নুরুল ইসলাম সুজন, রমেশ চন্দ্র সেন, মোতাহার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেইন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ৬২৯৯টি স্থান থেকে প্রায় ৩১ লাখ মানুষ এই ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। বাংলার মাটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে স্থান না দেয়ার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের গাইবান্ধায় একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য যে এই জামায়াত-শিবিরের অত্যাচার -নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত, মানুষকে সবসময় নিরাপত্তা দিত, তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিকে সংসদ সদস্যকে এভাবে হত্যা করা এটা কখনই মেনে নেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীকে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি- যারা এরসঙ্গে জড়িত যে কোনভাবে তাদেরকে (আততায়ীদের) খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ঐ সুন্দরগঞ্জে আমরা জানি তারা কিভাবে তান্ডব চালিয়েছিল। কিভাবে তারা দোকান পাট, সরকারি অফিস আদালত পুড়িয়েছিল। কিভাবে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে ঐ এলাকার মানুষ ছিল অতিষ্ঠ। এর বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছিল এই লিটন আমাদের এমপি। অথচ তাকেই তারা হত্যা করলো। কাজেই এ ধরনের জনপ্রতিনিধিকে হত্যাকান্ড আমরা কখনই মেনে নিতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘এই হত্যাকান্ডের বিচার হবেই বাংলার মাটিতে, এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারিবাহিনীতে বলব যেভাবেই হোক অপরাধীদের খুঁজে বের করতে হবে এবং এদের উপযুক্ত শাস্তিÍ অবশ্যই দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানই অন্যতম লক্ষ্য। আর জাঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস কখনও মানুষের জীবনে শান্তি বয়ে আনে না।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ভিডিও কনপরেন্সে যুক্ত গাইবান্ধার পুলিশ সুপারের কাছে লিটন, গাইবান্ধায় পুলিশ হত্যাসহ বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকান্ডের মামলাগুলোর আসামী গ্রেফতার এবং তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের মামলা ও দ্রুতবিচার আইনে নিষ্পত্তি হয়ে অদ্যাবধি অপরাধীদের সাজা না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত এই সকল মামলার চার্জশিট প্রদান এবং আসামীদের প্রেফতারে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীকে তৎপর হবার নির্দেশ দেন।