অগ্রসর রিপোর্ট :মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং গভর্নিং পার্টির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
নাগরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দশ বছরেরও কম সময় পর, সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জালিয়াতির পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যেই নির্বাচনে সু চি-র ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) একটি বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছি।
সামরিক মালিকানাধীন টেলিভিশনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং বর্তমানে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, এবং এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এনএলডির মুখপাত্র, মায়ো নিন্ট সোমবার এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থান পরিচালনা করছে।’
বিভিন্ন দেশের সরকার, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং অন্যান্যদের প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হল।
মিয়ানমার
মিয়ানমারের ঐতিহাসিক ও লেখক থান্ট মিন্ট-ইউ বলেছেন, ‘একেবারেই ভিন্ন একটি ভবিষ্যতের দরজা মাত্র উন্মুক্ত হয়েছে।’
তিনি একটি টুইটে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে যে এরপরে যা ঘটবে, তা আর কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এবং মনে রাখবেন, মিয়ানমার অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পরিপূর্ণ একটি দেশ, যার জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন গভীর, এবং এখানে লাখ লাখ লোক নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে না।’
জাতিসংঘ
মিয়ানমারের নতুন সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনের সূচনালগ্নে দেশের নাগরিক নির্বাচিত নেতাদের আটক করার ব্যাপারে ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটিরেস।
সকল আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচার ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন: ‘এই ঘটনাগুলো মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে ক্ষতিগ্রস্থ করার এবং সু চি ও অন্যান্য নেতাদের আটক করার যে পদক্ষেপ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিয়েছে, তার খবরে ওয়াশিংটন ‘উদ্বিগ্ন’।
জেন সাকি একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করতে বা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাধা দেয়ার যে কোনো প্রয়াসের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র, এবং যদি এই পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করা না হলে, দায়বদ্ধদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন-ও একটি বিবৃতিতে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন, এবং অবিলম্বে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আবারো দেশের নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা করেছে এবং রাষ্ট্রীয় কাউন্সেলর অং সান সু চি ও রাষ্ট্রপতি ইউ উইন মিন্টকে আটক করেছে’ – এমন খবরে অস্ট্রেলিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
‘আমরা সামরিক বাহিনীকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে এবং অবৈধভাবে আটককৃত সকল বেসামরিক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাই।’
ভারত
‘মিয়ানমারের ঘটনাবলিকে গভীর উদ্বেগের বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
‘মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে ভারত সর্বদাই সমর্থন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবশ্যই বহাল থাকতে হবে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সকল পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘মিয়ানমারের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সিঙ্গাপুর। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, এবং আশা করি যে জড়িত সকল পক্ষ সংযম প্রদর্শন করবে, সংলাপ বজায় রাখবে এবং ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ ফলাফলের জন্য কাজ করবে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
সু চি এবং ‘অবৈধভাবে আটককৃত অন্য সকলের’ তাত্ক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছেন এইচআরডাব্লিউ-র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস।
তিনি বলেন, ‘নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচন এবং মিয়ানমারের জনগণের নিজস্ব সরকার নির্বাচনের অধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ অসম্মান প্রদর্শন করে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ।’
‘আমরা মানবতাকর্মী এবং সামরিক বাহিনীর অন্যান্য সমালোচকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। সামরিক বাহিনীর মনে রাখা উচিত যে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদেরকে দায়বদ্ধ করা হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কথা বলতে এবং দায়বদ্ধদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলো বিবেচনা করার আহ্বান জানাই।’
সূত্র: আলজাজিরা