প্রতিনিধি শামীম আখতার
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বাঙালিদের ভরসা ডাক্তার তাহসিনা ইয়াসমিন। ইন্টারনাল মেডিসিনে ডিগ্রিপ্রাপ্ত এ বাঙালি চিকিৎসক সেখানে ‘ডক্টরস ফর অ্যাডাল্ট’ নামে একটি প্রাইভেট চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। বিভিন্ন দেশের রোগীরা তার কাছে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত কঠোর নিয়মনীতি মেনে সব রোগীকে সমানভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করলেও নাড়ির টানে কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট হয়েই যেন ওই শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি রোগীদের প্রতি একটু বেশি খেয়াল রাখেন তিনি!
তাহসিনা ইয়াসমিন হেসে বলেন, বিষয়টি হয়তো সে রকম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের রোগীরা তার কাছে ভরসা পান। মাতৃভাষায় সকল সমস্যা বলতে পারার সুযোগ থাকায় তারা অসুস্থ হলে সবার আগে তার কাছে ছুটে আসেন। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীরা চেম্বারে আসলে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সমস্যা শোনেন। প্রয়োজনে অন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফারও করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৫০ পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞদের একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. বিএম আতিকের স্ত্রী তাহসিনা ইয়াসমিন। বুধবার এই দম্পতি মার্কিন মুল্লুকে ফিরে যাবেন।
ডাক্তার দম্পতি তমিজউদ্দিন ও কানিজ মাওলার মেয়ে ডা. তাহসিনার জীবনের বেশিরভাগ সময় প্রবাসেই কেটেছে। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। পরে বাবা-মা দেশে ফিরলেও তিনি মামা-মামী, নানা-নানীর কাছে নিউইয়র্কে চলে যান। সেখানে ইংরেজি মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড থ্রি থেকে স্ট্যান্ডার্ড এইট পর্যন্ত পড়াশুনা করে দেশে ফিরেন। বাংলাদেশ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল শেষ করে আবারও পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
সেখানে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক থেকে চার বছরের গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি শেষ করেন। পরবর্তীতে নিউইয়র্কের বাফেলো ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমডি (ডক্টর অব মেডিসিন) ডিগ্রি অর্জন করেন। ডা. তাহসিনা দুই সন্তানের জননী।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ডা. তাহসিনা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারি পড়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক। দেশে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের পর মেডিকেলে পাঁচ বছর পড়াশুনা করে উত্তীর্ণ হলেই ডাক্তার হওয়া যায়। কিন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারি পড়তে হলে প্রথমে তাকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স মেডিসিন বিষয়ে চার বছর পড়াশুনা করতে হয়।
সেখানে শুধু বিজ্ঞানের বিষয় নয়, দর্শন, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞানসহ অসংখ্য বিষয়ে পড়াশুনা করতে হয়। সাফল্যের সঙ্গে পড়াশুনা শেষের পর চার বছর মেয়াদি এমডি কোর্সে ভর্তি হয়ে পাস করে ডাক্তার হতে হয়।
১৪ বছর বয়সী মেয়ে নাবিহা নর্দ এনজেলিকা নামে বিশ্বের নামকরা স্কুলের (স্কুলটিতে ইন্টারন্যাশনাল বেককালরিটি (আইবি) বিশেষায়িত পদ্ধতিতে পড়াশুনা করানো হয়) নবম গ্রেডের ছাত্রী ও ১১ বছর বয়সী ছেলে নাভান ষষ্ঠ গ্রেডের ছাত্র।
সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে উঠে আসে অতীত ও বর্তমান জীবনের পার্থক্য। অর্থাৎ তিনি ও তার স্বামী আগে কেমন ছিলেন, এখন কেমন আছেন এ প্রসঙ্গটি। এ প্রসঙ্গে তাহসিনা বলেন, টাকার অভাবে এক সময় ভাগাভাগি করে ম্যাকডোনাল্ডে বনরুটি খেতাম। ব্যাংকে একটি ডলারও জমা ছিল না। তবে তখনও যেমন সুখী ছিলাম, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখনও তেমনি সুখী আছি, ভবিষ্যতেও একইভাবে সুখী থাকার প্রত্যাশা করি।