স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম নারীদের সুযোগ দিয়েছে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে তাই কোন অজুহাতে চাকরি করা থেকে দেশের নারীদের নিরস্ত করার কোন অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, শালীনতা বজায় রেখে মহিলারা সকল কাজ করতে পারে। ইসলাম তাদের সেই সুযোগ দিয়েছে। ইসলাম একমাত্র ধর্ম, যে ধর্ম নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে, হোক তা সম্পদ অথবা কর্মক্ষেত্র। তিনি বিবি খাদিজার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, তিনি নারীদের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, পেশার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
মহানবীর (সা.) স্ত্রী বিবি আয়েশা যুদ্ধ ক্ষেত্রে সব সময় মহানবীর (সা.) পাশে থাকতেন এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের সামনে সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত এবং আমরা এটি সর্বদা সামাজিকভাবে ধারণ করবো।
আজ সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবসের উদ্বোধন এবং বেগম রোকেয়া পদক-২০১৫ বিতরণকালে তিনি একথা বলেন।
এ বছর বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লোকহিতৈষী ও সমাজকর্মী ড. তাইবুন নাহার রশিদ সম্মানজনক বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন।
বিবি রাসেল এবং মরহুম তাইবুন নাহারের পুত্র আলী আসগর খুরশীদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন।
১৯৯৫ সালে বেগম রোকেয়ার নামে সরকার এই এ্যাওয়ার্ড চালু করে। বেগম রোকেয়া অবিভক্ত বাংলার নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ, তিনি ছিলেন শীর্ষ নারীবাদী লেখিকা এবং বিশ শতকের প্রথমদিকের বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং লিঙ্গ সমতা ও নারী শিক্ষায় তাঁর অসামান্য প্রচেষ্টার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এতে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে বিবি রাসেল নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন।
বেগম রোকেয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর আদর্শ, তাঁর লেখা, দৃঢ় মনোবল এবং কর্মস্পৃহা কঠিন সময়ে আমাদের এখনো অনুপ্রেরণা জোগায়। যদিও রোকেয়া নিজে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করতে পারেননি।
এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই বিশিষ্ট নারী বিবি রাসেল এবং ড. তাইবুন নাহার রশিদকে নারী জাতির বন্ধন মুক্তিতে অবদান রাখার জন্য রোকেয়া পদক দিতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রংপুরের নিশবেতগঞ্জে শতরঞ্জি উৎপাদনকারীদের জন্য বিবি রাসেলের সহায়তার কথা তুলে ধরেন। নিশবেতগঞ্জের জনগণ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে তাদের তীর ধনুক নিয়ে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বিএনপি ও জামায়াত ২০০১ সালে পাকবাহিনীর মতো তাদের ওপর নৃশংসতা চালায়।
নিশবেতগঞ্জের জনগণের প্রতি বিবি রাসেলের সহযোগিতার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যা করেছেন, সেটি একটি অসামান্য কাজ এবং বাংলাদেশের একজন নারী ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে বিশ্বব্যাপী তাঁর সুখ্যাতিতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
সমাজে ড. নাহারের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. নাহার ১৯৪৮ সালে জাতীয় রক্ষী বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য আত্মগোপনে যান। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা দিবসে তিনি বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের নারী সমাজের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং বিশ্ব সমাজে একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা লাভ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারী সমাজের জাগরণ অত্যন্ত জরুরি। আমরা আরেকটি অন্ধকার যুগে প্রবেশ করতে চাই না। বেগম রোকেয়ার দেখিয়ে যাওয়া পথ অনুসরণ করে অনেক বাধা ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশের নারী সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া এমন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে নারী মর্যাদার আসন লাভ করবে, তিনি আশা করতেন নারীরা শিক্ষিত হবে এবং বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসনে স্থান পাবে।
তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হয়েছে এবং বাংলাদেশের নারীরা অনেক বাধা ডিঙ্গিয়ে সমাজের সকল পর্যায়ে তাঁদের অবস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারী মুক্তি, তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের বর্বর নির্যাতনের শিকার মা ও বোনদের চিকিৎসার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, তবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য এই যে, স্বাধীনতা লাভের কিছুকাল পরেই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। উল্লেখ্য, বেগম মুজিব স্বাধীনতা যুদ্ধকালে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের পুনর্বাসনে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন।
নারীদের উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো প্রয়োজন। ‘সরকার তৃণমূল পর্যায় নারীদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে এবং সমাজের সকল পর্যায়ে তাদের ক্ষমতায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’