চট্রগ্রাম:: মেয়েটির দুহাত ধরে ছেলেটি বলেছিল, ‘ভালবাসার জন্য ধর্মত্যাগ করতে হবে।’ এরপর তাকে নিয়ে সংসার পাতবে ছেলেটি। কথা রাখলেন মেয়েটি। ত্যাগ করলেন নিজের ধর্ম। বনে গেলেন মুসলিম। ২০০৭ সালে পরস্পর বিয়ে করলেন।
কথা ছিল শত বাধা আসুক। আমৃত্যু দুজন দুজনার হয়ে থাকবেন। একবছর পর সংসার আলো করে এলো ফুটফুটে কন্যা সন্তান। সুখে-দুঃখে কেটে গেল সাত বছর। হঠাৎ করে তাদের সংসারে দেখা দিল কালো মেঘের ছায়া। উত্তাল ঢেউ আচড়ে পড়লো। কেড়ে নিল মেয়েটির সব সুখ। ভেসে গেল সেইসব অর্থহীন প্রতিশ্রুতি। মেয়েটিকে ছেড়ে চলে গেল ছেলেটি। মেয়েটির অজান্তে দিয়ে দিল ‘তালাক’। এখন ছেলেটি সংসার পেতেছে অন্য নারীর সাথে। কিন’ ‘স্বামীকে’ ফিরে পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেয়েটি। চালিয়ে যাচ্ছেন আইনি লড়াই।
হতভাগ্য ওই নারী হলেন-সায়মা আক্তার মুনা (ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর রাখা হয়েছে)। বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম তার। বাবার নাম অনিল বড়-য়া। তিনি এখন বেঁচে নেই। মায়ের নাম বেবী বড়-য়া। পৈতৃক বাড়ি টেকনাফ উপজেলার উখিয়ার মরিচ্যায়। তার মা-ভাইবোন বর্তমানে রামুতে বসবাস করছেন। তার ‘স্বামীর’ নাম মো. রাশেদ। তিনি চট্টগ্রাম শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাড়ি চট্রগ্রাম বন্দর থানাধীন মাইজপাড়ায়। বাবার নাম এজাহার মিয়া। মায়ের নাম গুলজার বেগম। বিয়ের পর হামজারবাগে বসবাস শুরু করে সায়মা ও রাশেদ। এক বছর পর তাদের কোলজুড়ে আসে কন্যা সন্তান। নাম তার ফাহমিদা আক্তার (৭)।
সায়মার অভিযোগ, ভালোবাসার টানে ধর্ম ত্যাগ করলেও সেটি ভালভাবে নেননি রাশেদের মা-বাবা। বিভিন্ন সময় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন শ্বশুর পক্ষ। তার কাছ থেকে রাশেদকে ফেরাতে তৎপর হয়ে উঠে শ্বশুর পক্ষ। রাশেদের উপর বাড়তে থাকে মানসিক চাপ। সায়মাকে ‘তালাক’ দিতে রাশেদকে বাধ্য করে শ্বশুর এজাহার মিয়া এবং শাশুড়ি গুলজার বেগম।
সায়মার অভিযোগ, ২০১৪ ডিসেম্বর মাসে ‘তালাকের নোটিশ’ দিলেও বিষয়টি জানতেন না তিনি । তালাকের কারণ জানতে শ্বশুর বাড়ি গেলে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন রাশেদের মামা। এ সময় প্রতিবাদ না করে নিশ্চুপ থাকেন রাশেদ। ঘটনার পর ‘তালাক’ প্রত্যাহার করে নিতে রাশেদকে বারবার অনুরোধ করেন সায়মা।
তিনি সায়মাকে বলেন, ‘আমি মা-বাবার কথার বাইরে যেতে পারব না।’ এ সময় রাশেদকে সায়মা প্রশ্ন করেন, তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। তোমার জন্য ধর্ম ত্যাগ করেছি। পরিবার ত্যাগ করেছি। সংসারে আছে একটি মেয়ে। পথে পথে ঘুরছি। আমি এখন কোথায় যাব। কার কাছে আশ্রয় পাব।’
সায়মার কান্নায় মন গলেনি পাষাণ ‘স্বামী’ রাশেদের। সম্প্রতি মা-বাবার কথা মতো আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকা থেকে আরেকটি বিয়ে করে রাশেদ। বিষয়টি শুনে বেদনায় নীল হয়ে উঠে সায়মার মন। তখন থেকে অঝোর কাঁদছেন। ফের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে নিতে বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেননি রাশেদ।
উপায় না দেখে আইনের আশ্রয় নেন সায়মা। প্রতারণা করে ‘তালাক’ যৌতুকের কারণে নির্যাতনের অভিযোগে রাশেদ এবং তার মা-বাবা ও বোনদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ ও ২ এ পৃথক দুটি মামলা করেন সায়মা। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি রাশেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৪০ দিন কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান রাশেদ। একটি মামলার (১০৪৭/২০১৪-ট্রাইব্যুনাল-২) অভিযোগ গঠন করেন বিচারক।
সায়মার দাবি, স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেলে তার সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবেন। সার্থক হবে তাদের ভালবাসা। জানতে চাইলে রাশেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সায়মাকে ফের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাচ্ছি। কিন’ মা-বাবার জন্য পারছি না।’ সায়মার ঘরে আপনার কন্যা সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে প্রশ্ন করলে নিরুত্তর থাকেন রাশেদ।