ঢাকা, ৭ নভেম্বর ২০১৫ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত নেদারল্যান্ড সফর ঢাকা ও আমস্টার্ডামের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এখানে কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে খুবই সফল ও অর্থবহ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক চৌধুরী আজ বাসস’কে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্প্রীতির সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত নেদারল্যান্ড সফর দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো জোরদারের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।’
ফারুক চৌধুরী বলেন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়ন,এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার, বেসরকারি খাত উন্নয়ন, কৃষি, বন্দর উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশ একত্রে কাজ করতে সম্মত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সফর খুবই সফল ও অর্থবহ হয়েছে।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, নেদারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের শেখার অনেক কিছু আছে। পানির সঙ্গে লড়াইয়ের পর আধুনিক নেদারল্যান্ড গঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশও প্রতিবছর বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে….উভয় দেশ অভিজ্ঞতার বিনিময় এবং একে অপরকে সহায়তা প্রদান করলে উভয়েই লাভবান হবে।
এ প্রসঙ্গে ফারুক চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে উভয় দেশের সম্পাদিত অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জনগণের জন্য ফলদায়ক এবং নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।
তিন দিনের নেদারল্যান্ড সফর কার্যক্রম সমাপ্ত করে শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন। ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে যান।
২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পর পর দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই শেখ হাসিনার কোন ইউরোপীয় দেশে প্রথম সরকারি সফর।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুটের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, কৃষি, বন্দর উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নসহ পারস্পরিক স্বার্থে বৈশ্বিক ও দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ড শিক্ষা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদারের লক্ষ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
চুক্তিগুলো হলো- নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পররাষ্ট্র দফতর বিষয়ে আলোচনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
বাংলাদেশ থেকে জুনিয়র কূটনীতিকদের জন্য প্রশিক্ষণ সহযোগিতা বিষয়ে নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই)।
স্যাক্সিঅন এ্যাপলাইড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিস বিদ্যালয় এবং বিজিএমইএ ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যিালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
স্যাক্সিঅন এ্যাপলাইড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজিএমইএ ফ্যাশন এন্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি/সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরকালে হেগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ডাচ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক ভোজসভায় যোগ দেন। তিনি রাজপ্রসাদে আয়োজিত নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমার সঙ্গে বৈঠক করেন।
নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রী এবং অবকাঠামো ও পরিবেশ মিলানি সুলজ ভান হাগেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেগে গ্রান্ড হোটেলে সাক্ষাৎ করেন।
শেখ হাসিনা ডেলটা আইল্যান্ড এবং হারবোর পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি ডাচ ডেলটা এপ্রোচের ওপর বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী কুরহাউস হোটেলে অনুষ্ঠিত এক বাণিজ্য সেমিনারে যোগ দেন। তিনি কুর্নস্ট্রা এন্ড কোং পরিদর্শন করেন। শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, নৌ-সচিব শফিক আলম মেহেদি এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারী ইহসানুল করিম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
পাশাপাশি এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ১৯ সদস্যের বাংলাদেশী একটি ব্যবসায়ী দল শেখ হাসিনার সঙ্গে নেদারল্যান্ড সফর করেন।