অগ্রসর প্রতিবেদক: জনগণ ও মাতৃভূমিকে সুরক্ষা দিতে এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে সহিংস চরমপন্থা এবং কট্টরপন্থা বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে কাজ করার ব্যাপারে নতুন করে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
‘বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং মানবতার মুক্তি লালনকারী আরো অনেক সমাজের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা থাকবো।’
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট’র ব্যুরো অব সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী নিশা দেশাই বিশওয়াল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক সংবর্ধনায় এ কথা বলেন।
৪৬তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় এ কথা বলা হয়।
বিশওয়াল বলেন, আমরা চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি এবং ঢাকা ও ওয়াশিংটন উভয়ই আমাদের জনগণ, আমাদের মাতৃভূমি সুরক্ষায় এবং আমাদের গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে চরমপন্থা প্রতিরোধে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি।
দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার এবং মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টায় অবদান ও সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশে আগ্রহদ্দীপক উন্নয়নের জন্য এনজিও ও বেসরকারি খাতের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করে বিশওয়াল বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের এই সাফল্যের অনেক ক্ষেত্রে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের স্বাস্থ্যবান ও আরো উৎপাদনশীল জীবন গড়ে তুলতে সহায়তা হিসেবে ইউএসএআইডি প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর আমেরিকানরা বাংলাদেশে তৈরি ৫শ’ কোটি ডলারের পণ্য কিনছে। আমেরিকার জনগণ দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে এবং আজ আমি এখানে জোর দিয়ে বলছি যে আমরা আপনাদের পাশে থাকবো।
বাংলাদেশের জনগণ এবং সুশীল সমাজ সক্রিয় উল্লেখ করে বিশওয়াল বলেন, আমরা সেখানে প্রতিটি ব্যক্তির মুক্তভাবে কথা বলার, অবাধে তাদের বিশ্বাসের চর্চা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনকে সমর্থন দেব।
ইউএস এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট বলেন, আগামী দশকগুলো আমাদের সামনে নতুন জটিল চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, উত্তম পন্থায় আমরা এর সমাধান খুঁজে বের করবো।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের দূত বলেন, পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী শক্তির সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং শাস্তি না পাওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ জীবনের পথে একটা চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, শয়তানি শক্তির ঘৃণ্য কর্মকা- সম্প্রতি কমে এসেছে এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম চলছে। তিনি বাংলাদেশের ন্যায়বিচারের বিষয়ে সমর্থন দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘এটা সর্বজন বিদিত বিষয় যে বিচার এবং কেবলমাত্র বিচারই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ করতে এবং বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি আনতে পারে।
জিয়াউদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ঢাকা ও ওয়াশিংটনের চলমান পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই শক্তিশালী এবং বাংলাদেশ তার ধর্মনিরপেক্ষ ও সর্বজনীন সামাজিক বন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জোরদারে দৃঢ়প্রতীজ্ঞ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চারটি উদ্যোগে অংশগ্রহণ করছে। তিনি আরো বলেন, অঞ্চল ও অন্যান্য অঞ্চলে আমাদের বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে ‘ইকুয়াল ফিউচার পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ বিষয়ে কাজ করতেও ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক বিদেশী কূটনীতিক, পররাষ্ট্র দপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূতগণ, রাজনীতিক, শিক্ষা ও সুশীল সমাজের সদস্যগণ, সিনিয়র সাংবাদিক, শিল্পী, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক অফিসার এবং বাংলাদেশ সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে দু’টি স্থানীয় সাংস্কৃতিক গ্রুপ নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করে।
মিলনায়তনে বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী কালিদাস কর্মকার ও মোস্তফা টি এরশাদের আধুনিক চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই চিত্র প্রদর্শনী চলবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।