স্টাফ রিপোর্টার: দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনার পাশাপাশি বিশ্বমুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য, শান্তি , সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ,সংহতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব ।
তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলীগ জামাতের দিল্লীস্থ মারকাজের শুরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ। ১১টা ৫মিনিটে তিনি মোনাজাত শুরু করেন এবং শেষ করেন ১১টা ৩৫ মিনিটে। প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী আখেরি মোনাজাতকালে গোটা ইজতেমা ময়দানে যেন এক পুণ্যময় ভুমিতে পরিণত হয়।
গত ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়। রাজধানীর উপকন্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে অনুষ্ঠিত বহু কািঙ্খত এই আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত ও হেদায়েত প্রার্থনা করেছেন। মুসল্লিরা নিজ নিজ গুনাহ্ মাফ ও আত্মশুদ্ধি চেয়েছেন। এ সময় মহান আল্লাহ পাকের অশেষ মহিমায় আবেগ-আপ্লুত লাখো মুসল্লি’র কণ্ঠে উচ্চারিত ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে তুরাগ তীর। অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে পড়েন অনেক মুসল্লি।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনৈতিক মিশনের সদস্য ও পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
মোনাজাতের আগে মাওলানা সাদ ইমান ও আমলের ওপর বিভিনড়ব হেদায়েতী বয়ানে বলেন, দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের প্রতি আমাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। দুনিয়ার জিন্দিগীর চেয়ে আখেরাতের জিন্দিগী হলো স্থায়ী। তাই আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে আখেরাতের জিন্দিগীর দিকে ধাবিত হতে হবে। আল্লাহর কাছে কান্না -কাটি করে ক্ষমা চেয়ে পাপমুক্ত হতে হবে। মোনাজাতের সময় গোটা টঙ্গী এলাকা আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে।
১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানব বলয় : বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় দফায় তিন দিনব্যাপি মুসলিম বিশ্বের এই জমায়েতের শেষ দিনে রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নরসিংদী, ভৈরব, সাভার, মানিকগঞ্জ, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইজতেমা ময়দানে আসেন। ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জীপ, কার এবং নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এছাড়া ভোর থেকেই রাজধানীর খিলতেস্থ বিশ্বরোড থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে যানবাহনের অভাবে সকাল থেকেই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে কাফেলার পর কাফেলা। এতে তুরাগের তীরকে কেন্দ্র করে কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল মানব বলয় সৃষ্টি হয়। মোনাজাত শুরুর আগেই সকাল ১০টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় তুরাগ তীরের পুরো ইজতেমাস্থল ও চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা।
১৯৬৭ সাল হতে টঙ্গিতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গত ৮ জানুয়ারি প্রথম দফায় এবারের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়ে ১০ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এবারের মোনাজাত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলি সরাসরি সম্প্রচার করায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ মোনাজাতে শরীক হতে পেরেছেন বলে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।