অগ্রসর ডেস্ক:
ভারতে নজিরবিহীন বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বন্যা ও ভূমিধসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আসাম, মেঘালয়, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, গত সোমবার জানিয়েছে এনডিটিভি।
বন্যার কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আসামে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ২২ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মেঘালয় ও আসামের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে ওই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে এবং বিমান বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বন্যাকবলিত রাজ্যগুলোতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা পাঠানো হচ্ছে বলে এক টুইটে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আসামে গত দুইদিনে আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এমন খবর প্রকাশ পাওয়ার পর রাজ্যটির কর্তৃপক্ষ উদ্ধার ও ত্রাণ অভিযান আরো জোরদার করেছে। কুন্দিল নদীর ভাঙনের কারণে বেশি কিছু জনপদ হুমকির মুখে আছে বলে জানা গেছে। গত তিন দিন ধরে প্রতিবেশী নেপালসহ বিহারে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজ্যের পাঁচটি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। মহানন্দা ও কানকাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠেছে। বন্যার ট্রেন চলাচলেও মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। বন্যাজনিত কারণে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং পাঁচ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে রেল ও সড়ক যোগাযোগে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। বন্যার কারণে ট্রেন ও গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের কুচবিহার জেলা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই জেলার প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় আরো দুই লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রোববার হিমাচল প্রদেশে বড় ধরনের এক ভূমিধসের ঘটনায় অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে একটি মহাসড়কের ১৫০ মিটার অংশ ধসে পড়া কাদামাটি ও পাথরে চাপা পড়েছে। গত পাঁচদিনের টানা বৃষ্টিতে মেঘালয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম গাড়ো পাহাড় জেলায় প্রায় ৮০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। খাশি পাহাড় জেলায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
চলতি বর্ষায় বন্যার কারণে গুজরাটে মৃতের সংখ্যা ২১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বনসকন্ঠ জেলায় ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বন্যায় রাজ্যটির সাড়ে চার লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বর্ষায় ভারতের প্রায় ২০টি রাজ্য বন্যা কবলিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এতে ৬০০ লোক প্র্রাণ হারিয়েছেন, ২৪ হাজার ৮১১টি গৃহপালিত পশু মারা গেছে, ৬৩ হাজার ২১৫টি বাড়ি এবং দুই লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।