অগ্রসর রিপোর্ট: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নে যে অসাধারণ দূরদৃষ্টি ও সাহসীকতা প্রদর্শন করেন তা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসার পরপরই তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান এবং সে অনুরোধের জবাবে, ভারত সরকার তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ জুলাই জাতীয় সংসদকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশের ভূমি থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের এই ধরনের দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল এবং এটি বঙ্গবন্ধুর মত সাহসী ও স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘদিনের পুরনো সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ১৬ মে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থলসীমান্ত চুক্তি (এলবিএ) স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ সেই বছরই দ্রুত সেই চুক্তির অনুসমর্থন দেয় অথচ ভারতীয় পার্লামেন্ট এর অনুমোদন দিতে ব্যর্থ হয়। তবে ৪১ বছর পর ভারতীয় লোকসভা ২০১৫ সালের ৭ মে সর্বসম্মতিক্রমে এই আইন পাস করে এবং এর ফলে ৬৫ বছর পর উভয় দেশের ছিটমহলবাসীর ভোগান্তির অবসান ঘটে।
সমুদ্রের বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে যখন ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট” প্রণয়ন করেন তখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এইরকম কোন আইন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট প্রণয়নের প্রায় আট বছর পর ১৯৮২ সালে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট গৃহীত হয়।
বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশ ১১৬ গুরুত্বপূর্ণ দেশের স্বীকৃতি অর্জনে সক্ষম হয়েছিল।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), নন-এলাইনেড মুভমেন্ট (ন্যাম) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ), ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং অন্য কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা সদস্যপদ পায়।
বিশ্ব শান্তিপরিষদের উদ্যোগে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় এশীয় শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রকাশিত ‘ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য ছিল- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা, সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং জোট নিরপেক্ষ নীতির অনুসরণ।
জাতিসংঘ, ন্যাম, কমনওয়েলথ বা ওআইসিসহ যে কোন আন্তর্জাতিক ফোরামে দেয়া ভাষণে জাতির পিতা বলিষ্ঠ কণ্ঠে তার জোট নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির কথা ঘোষণা করতেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় প্রদত্ত ভাষণে তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতায় তাঁর পররাষ্ট্র নীতির প্রধানটি বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী এবং এর পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে- ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব।
বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশই তৈরি হতে পারে আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার সুফল বয়ে আনতে এবং আমাদের সকল শক্তি ও সম্পদ দিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং বেকারত্ব ও রোগশোকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তি যোগাতে- এই ধারণা থেকেই শান্তির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির জন্ম হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির বলেন, বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্র নীতির প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি (বঙ্গবন্ধু) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অন্যান্য দেশের স্বীকৃতির আদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগদানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে অনুপ্রাণিত করতেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দেন এবং তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা, অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা সহ জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
‘বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্ব বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিল’-জমির বলেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।