অগ্রসর রিপোর্ট : যশোরের নওয়াপাড়া থেকে কবি, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করেছে র্যাব-৬। তিনি এখন নওয়াপাড়া থানায় আছেন।
র্যাব ৬-এর সিও খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ বাহিনীর সহায়তায় রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তাকে পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে খুলনাতে নেওয়া হচ্ছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে খুলনার শিববাড়ী মোড় থেকে থেকে হানিফ পরিবহনের একটি গাড়িতে করে ঢাকায় ফিরছিলেন ফরহাদ মজহার। এ সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যশোরের নওয়াপাড়ায় গাড়িটি চেক করে পুলিশ। ওই গাড়িতে ছিলেন ফরহাদ মজহার। তাকে ঢাকার আদাবর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি সকালে যে পোশাক পরে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিল না। তিনি কিভাবে খুলনা এসেছেন তা জানতে তার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। রাতে খুলনা র্যাব অফিসে প্রেস ব্রিফিং হবে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, র্যাব-৬ খুলনার সদস্যরা জানতে পারেন, হানিফ পরিবহনের একটি গাড়িতে উঠেছেন ফরহাদ মজহার। র্যাব-৬ পরিচালক জানান, তারা ওই পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন, গাড়িটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। পরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ভাঙাগেট এলাকায় ব্যারিকেড দেয় র্যাব। রাত ১১টার পর সেখানে নির্দিষ্ট গাড়িটি পৌঁছালে র্যাব সেটি থামিয়ে তল্লাশি করে এবং ফরহাদ মজহারকে পায়।
এদিকে, নওয়াপাড়ার ভাঙাগেট এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে রাত ১১টার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একজন যাত্রীকে নামিয়ে নেন বলে নিশ্চিত করেছেন পরিবহনটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপক দীন ইসলাম দিনু।
অভয়নগর থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, আমি নিজে বেঙ্গল গেট এলাকায় হানিফ পরিবহনের বাস থেকে তাকে আটক করেছি। তাকে অভয়নগর থানায় নেয়া হয়েছে।’ পরবর্তীতে তাকে কোথায় নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
উদ্ধারের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরহাদ মজহারের পারিবারিক বন্ধু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, এইমাত্র তার স্ত্রী ফরিদা আখতার উদ্ধার হওয়ার খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, উদ্ধারের পর ফরহাদ মজহারের সাথে তার কথাও হয়েছে।
শাহরিয়ার পলক নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘খুলনা থেকে আসছি হানিফের বাসে করে! নওয়াপাড়ায় হঠাত করে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা হলো ! সুপারভাইজার কোনো কথার উত্তর দিলো না। প্রায় ৪০মিনিট পর ৩টি র্যাবের গাড়ি এসে তল্লাশি করলো, আর বাসের পেছনের সিট থেকে উদ্ধার হলো- নিখোঁজ কবি ফরহাদ মজহার…..। উনি ভালো আছেন , সুস্থো আছেন!!’ রাত ১১টা ২৮ মিনিটে পলক এই স্ট্যাটাসটি আপলোড করেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় যশোরে পাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে ফরহাদ মজহারকে খুলনায় নিজের রেস্তোরাঁয় দেখার দাবি করেছিলেন ‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক আব্দুল মান্নান। খুলনার নিউ মার্কেটের সামনে এই রেস্তোরাঁটি। মান্নানের কাছে খবর পাওয়ার পর র্যাব জোর অনুসন্ধান শুরু করে।
‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাত ৮টার দিকে তার রেস্তোরাঁয় ভাত খেয়েছিলেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, আমার হোটেলে ভাত, ডাল ও সবজি খেয়ে রাত ৮টার দিকে বের হয়ে যান তিনি। তার পরনে লুঙ্গি ও মাথায় সাদা কাপড় ছিল। তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।
ফরহাদ মজাহারকেই দেখেছেন, তা নিশ্চিত হলেন কীভাবে- এই প্রশ্নে মান্নান বলেন, প্রথমে আমি তাকে চিনতে পারিনি, পরে টিভিতে তার ছবি দেখে চিনতে পারি। তখন আমি বিষয়টি র্যাবকে জানাই।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক রফিকুল বলেন, রেস্টুরেন্ট মালিক আব্দুল মান্নান রাত ১০টার দিকে বিষয়টি আমাদের জানায়। তখন তার খোঁজে অভিযান চালাই।
ডানপন্থি অধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার সোমবার ভোরে ঢাকার শ্যামলীর রিং রোডে তার বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই অপহৃত হন বলে তার স্বজনরা পুলিশকে জানান। এরপর পুলিশ তার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে খুলনা অঞ্চলে তার অবস্থান শনাক্ত করার কথা জানিয়ে ওই শহরের কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায় র্যাব।
খুলনার সোনাডাঙ্গার ইব্রাহিম মিয়া সড়কের বিভিন্ন বাড়িতে বিকালে তল্লাশি চললেও ফরহাদ মজহারকে পাওয়া যায়নি। এরপর মধ্যরাতে মিলল তার হদিস।