দিনাজপুর প্রতিনিধি- দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুরু থেকেই আধুনিক ভবন ও রোগ নির্ণয়ে উন্নত সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরে জনবল নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলার রোগীরা চিকিত্সা নিতে এসে অসহায় হয়ে পড়ছেন। তাদের রংপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অথচ জনবল থাকলে ওই রোগের চিকিৎসা এ মেডিকেল কলেজেই করা সম্ভব হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট ও ২৪ একর জমির ওপর নির্মিত। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে হাসপাতাল ভবন নির্মাণসহ আধুনিক চিকিত্সা সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেয়ায় তখন কোনো কার্যক্রম চালু করা যায়নি। ২০১০ সালে দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ নেন। কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালুও করা হয়। সিদ্ধান্ত ছিল পর্যায়ক্রমে ২৪টি বিভাগ চালু করা হবে। কিন্তু মাত্র ১৩টি বিভাগ চালু করা হয়েছে। এখন ওই ১৩টি বিভাগেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নেই। ১৬৫ জন চিকিৎসকের জায়গায় কর্মরত মাত্র ৭০ জন।
মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই, সিটিস্ক্যান, এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাম, ক্যাথল্যাবসহ সব ধরনের অত্যাধুনিক মেশিন ও সরঞ্জাম রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও টেকনেশিয়ান সংকটের কারণে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাছাড়া বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় এ হাসপাতালে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিত্সার জন্য একটি বার্ন ইউনিট খোলা হয়। কিন্তু ওই বিভাগেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। অন্যান্য বিভাগে ২২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত ১০ জন। জরুরি চিকিত্সা ও অপারেশনের জন্য ১১ জন অ্যানেসথেশিওলিস্টের পদের মধ্যে ১০টি পদই শূন্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কলেজ হাসপাতালে অধিকাংশ সময় রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আর জটিল রোগীদের রংপুর কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অথচ প্রয়োজনীয় জনবল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলে ওই রোগীর চিকিত্সা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও বনগাঁও গ্রামের মেহেরুল ইসলাম জানান, তিনি বৃহস্পতিবার হাসপাতালে একজন রোগী নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখনো কোনো চিকিৎসক রোগীকে দেখেননি। ফলে তিনি রোগীকে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জুলফা জাহান জানান, সরকারিভাবে নিয়োগকৃত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যাও কম। ২৪৬ জন ওয়ার্ডবয়ের বিপরীতে ৪৪ জন, ৩৮৪ জন সেবিকার বিপরীতে ২০২ জন কর্মরত। তাছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ আউট সোর্সসিংয়ের ওপর নির্ভর করে চালাতে হচ্ছে। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সিদ্দিকুর রহমান জানান, স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে চিকিত্সাসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জনবল নিয়োগ দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে চিকিত্সা কার্যক্রম চালুর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে।