অগ্রসর রিপোর্ট :দিনভর বৃষ্টি, কখনো ইলশেগুড়ি কখনো মুষলধারে। বৈরি আবহাওয়ার মাঝেও জমজমাট ঈদ বাজার। বৃষ্টিভেজা হয়েই পরিবার পরিজনের জন্য ঈদের কেনাকাটা করছেন মানুষ। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর প্রতিটি শপিংমল। নগরীর বিপণিবিতানগুলোয় যেমন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়, তেমনই এসব এলাকার সড়কগুলোয় দিন দিন যানজটের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই যানজট ও ভিড় এড়াতে ঈদ কেনাকাটার জন্য বেছে নিচ্ছেন মধ্যরাতকে। আর ক্রেতাসমাগম হচ্ছে বলে মধ্যরাত অবধি রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোও খোলা রাখছেন দোকানিরা। শুধু পোশাকই নয়, এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। বেচাকেনায়ও দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দিনের বেলা নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে তরুণ-তরুণী ও পুরুষ ক্রেতারা মার্কেটে বেশি ভিড় করছেন।
এটি দেশের সিংহভাগ মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ সময়ের কেনাকাটায় থাকে উৎসবমুখরতাও। ঈদে যত না আনন্দ তার চেয়ে বেশি আনন্দ পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসের কাজ শেষ করে বিকেলেই নেমে পড়েন অনেকে কেনাকাটায়, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিক্রেতারা বাড়তি রোজগারের আশায় রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট, শপিংমল ও নামী-দামী ব্র্যান্ডের শোরুম খোলা রাখছেন মধ্য রাত পর্যন্ত। ফুটপাথও সরগরম মাঝরাত অবদি। দিনের তুলনায় ক্রেতা কম বলে বিক্রেতারাও বাড়তি খাতির করছেন ক্রেতাদের। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বিপণিবিতানে এবার আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেউ কেউ সাদা-কালো, হলুদ, নীল কাপড়ের ওপর কৃত্রিম ফুল দিয়ে তাদের বিপণিবিতান, শপিংমল এবং প্রবেশদ্বার দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে রেখেছেন।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি শপিং মল ঘুরে দেখো গেছে গত কয়েকবছরের ধারাবাহিকতায় এবারওে ঈদের বাজার দখল কারে আছে ভারতীয় পোশাক। নানা রকম ডিজাইন আর হিন্দি সিনেমার নাম অনুসারে বেশ জনপ্রিয় ভারতীয় পোশাকগুলো। ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় হিন্দি-বাংলা সিনেমাসহ টিভি চ্যানেলগুলোর মেগাধারাবাহিক নাটক ও সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের পরনের পোশাকের চাহিদা এখন তুঙ্গে। একশ্রেণীর মৌসুমী ব্যবসায়ী আমদানি করছেন ভারতীয় এসব পোশাক। আমদানির পর বিভিন্ন নামে লাগানো হচ্ছে ট্যাগ। রাজধানীর গাউছিয়া, নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, টুইনটাওয়ার, ফরচুন এবং ইস্টার্ণ প্লাজাসহ সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে ভারতের পোশাক। ক্রেতাদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি দোকানেই নানা ধরনের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস এবং বাচ্চাদের পোশাক সাজানো হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু পাকিস্তানী ও চায়না পোশাক থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা ভারতীয় পোশাকের দিকে। শুধু রাজধানীই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের ঈদ বাজারেও একচেটিয়া দখল ভারতীয় পোশাকের।
এসব পোশাকের মধ্যেবাহুবলী, বাজিরাও মাস্তানি, জারা, হুররাম, মাসাককালি, সামপুর ইত্যাদি কিশোরী-তরুণীদের বেশি আকর্ষণ করছে। দোকানীরা জানান সাত হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকায় এসব গাউন ড্রেসগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও গত বছরের কিরণমালা, মধুমালা, মায়াপরী, পাকিস্তানি লনসহ বিভিন্ন নামের থ্রিপিস ও ফোর পিস পোশাকও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। ছেলেদের কালার ফুল শার্ট, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট, জিন্স ও গ্যাভার্ডিন প্যান্টের পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, শুধু পোশাক নয়, এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রীরও বেচাকেনা বেড়েছে। এখন দম ফেলার যেন সময় নেই দোকানিদের। সাধারণত দিনের বেলায় নারী ক্রেতারা রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ভিড় জমাচ্ছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বদলে যাচ্ছে ক্রেতার ধরন। এ সময় নারী ক্রেতাদের চেয়ে ঈদবাজারগুলোয় বেশি দেখা যায় তরুণ-তরুণী ও পুরুষদের।