সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারারুদ্ধ করে বিগত তত্ত্বাবধায় সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এমনকি তাকে হত্যার চক্রান্তও হয়েছিলো। কিন্তু জনগণের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যার মধ্য দিয়ে দেশে দুঃশাসনের অবসান হয়।
রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে এই আলোচনার সূত্রপাত করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তারানা হালিম বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের মুক্তি পেয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে। এখন উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দেশ চলছে। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা হাল ধরেছেন বলে নৌকা চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে দেশ অগ্রসর হচ্ছে। অবশ্য এজন্য জননেত্রীকে অনেক জেল-জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।
বৃটিশ পার্লামেন্টে বিজয়ী তিন বাঙ্গালি কন্যাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, পনের হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী বিজয়ী হয়েছেন। টিউলিপের একাগ্রতা, কর্তব্য নিষ্ঠা ও ন্যায় পরায়ণতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবারের শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। তিনি আরো বলেন, টিউলিপ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য নাতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য ভাগ্নি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার যোগ্য সন্তান। যিনি বাঙ্গালি জাতির ভাবমুর্তিকে উজ্বল করেছেন।
পংকজ দেবনাথ বলেন, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অভিযান শুরু করলেও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলো। অসংখ্য মামলা দেওয়া হলো। নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে মাইনাসের চেষ্টা করা হলো। তিনি আরো বলেন, কারাগারে শেখ হাসিনা ভোটার হতে চাইলে খালেদা জিয়া ভোটার হতে রাজী হননি। কারণ তিনি নির্বাচন চান না। তিনি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সব সময় অবস্থান নিয়েছেন। এখনও নিচ্ছেন। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
গণমানুষের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় দাবি করে সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বলেন, গণতন্ত্রের শত্রু ও এক-এগারোর কুশীলবরা কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের মুহুর্তে জাতির উদ্দেশ্যে লেখা ২২ লাইনের চিঠিতে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি আমৃত্যু জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, কারাগারে শেখ হাসিনার প্রতি নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে ভাঙ্গা খাটে থাকতে দেওয়া হয়েছে। ইঁদুরে কাটা লেপ তোষক দেওয়া হয়েছে। খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের প্রতি অসীম সাহস ও জনগণের প্রতি দ্বায়বদ্ধতার কারণে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, তার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি মুক্তি পেয়েছে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে বসতে পেরেছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কোন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যায় না, এটা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার পরিকল্পনা হয়েছিলো। তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিলো। কিন্তু জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে এনেছে। তিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি কাজ করছেন। ক্রিকেটে একের পর এক বিজয় প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের কারণে সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, জনগণের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার প্রতিদান পেয়েছেন শেখ হাসিনা। রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে গেলেও জননেত্রীর মুক্তির দাবি থেকে পিছু হটেনি দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তিনি আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা দিনের পর দিন বাচ্চার মুখ দেখতে পারেনি। বাচ্চা মায়ের দুধ খেতে পারেনি। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো নেত্রীর মুক্তি। এই দিনে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সুধা সদন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। বিশেষ আদালতে সেই মামলার বিচারও শুরু হয়।