কক্সবাজার প্রতিনিধি : তপ্ত রোদ, আর রমজানের রোজা নিয়ে দেড় কিলোমিটার অনুপযোগি সড়ক হেঁটে তারপর স্প্রীড বোট যোগ ৬ মিনিটের পথ অতিক্রম করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি শুক্রবার সকালে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় এক সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য প্রদান এবং ত্রাণ বিতরণ করে গাড়ি বহন নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফের মহেশখালিয়া পাড়া হয়ে তিনি সাবরাং এর শেষ সীমানায় পৌঁছেন বেলা ১১ টার দিকে। তারপর শুরু হয় হাঁটার।এক সময় শাহপরীরদ্বীপটি টেকনাফেল মুল সীমান্ত দিয়ে সড়ক পথে সংযোগ থাকলে গত ১০ বছর ধরে সড়কটি বিচ্ছিন্ন। বঙ্গোপসাগর দিয়ে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ক্রমাগত সংস্কারের অভাবে দুই পাশে সারিবদ্ধ গাছের সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। আর ওইটি এখন অনেকটা হাঁটাও উপযোগি নয়। আর ওই সড়ক দিয়ে কিছু দূর থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদির কাছে জানতে চান “পথটি আর কতদূর?”
এমপি বদি জানান, ১০ মিনিট। এভাবে দেড় কিলোমিটার সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে সেতুমন্ত্রী সড়কটি জরাজীর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এসময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রামজান, এসড়কে হেঁটে গিয়ে ফিরে আসবো কখন। আর ইফতার করবো কখন। এসব এলাকার মানুষ তো অনেক কষ্ট করেন।” এ সড়ক নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে উদ্দেশ্য করে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, দুই দুইবার এমপি হলা। কিন্তু এটুকু সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক নির্মাণ করতে পারলা না।
ঘূর্ণিঝড় মোরায় কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে মন্ত্রী ও আ’লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রিয় নেতাদের একটি বহর বৃহস্পতিবার বিকালে বিমানযোগে কক্সবাজার আসেন। ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আ’লীগের কেন্দ্রিয় দলটিতে রয়েছেন, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ হোসেন চৌধুরী ও একেএম এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রিয় নেতা বীর বাহাদুর ও আখতারুজ্জামান এবং দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপসহ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ায় আ’লীগের নেতারা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এসময় আয়োজিত সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা এখানে ফুল নিতে আসিনি, ফটোসেশন করতেও আসিনি। আমরা এসেছি মানুষের বিপদে আর কষ্টে পাশে দাঁড়ানোর জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীবের আপনজন। তাঁর নির্দেশেই আপনাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে অবস্থান করার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “এই বিপদের সময় তিনি বিদেশে গেছেন। কিন্তু তাঁর মন পড়েছিল দেশের দুর্গতদের মানুষদের প্রতি।
তাঁর মন ছিল টেকনাফ, সেনটমার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার দুর্গত মানুষদের প্রতি।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত একজন মানুষও যেন দুর্যোগের কারণে কষ্ট না পায়। তাদের সকলকে সহযোগীতার আওতায় নিয়ে আসতে। ত্রাণ দেয়া ছাড়াও যেন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।পরে আওয়ামীলীগের নেতারা ৪ টি দলে ভাগ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও ত্রাণ বিতরণ করতে যান।
এসব দলের সঙ্গে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, আশেক উল্লাহ রফিক ও সাইমুম সরওয়ার কমলসহ জেলা আ‘লীগের নেতারাও অংশ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে সেতুমন্ত্রী ও আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে টেকনাফে একটি দল। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে একটি দল পরিদর্শনে যান কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল যান চকরিয়া, পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়।
এছাড়া অপর একটি দল আ’লীগের কেন্দ্রিয় নেতা অখতারুজ্জামান ও বীর বাহাদুরের নেতৃত্বে বান্দরবানের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় নেতাদের যৌথ অংশগ্রহণে কক্সবাজার পৌরসভার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশনের পর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে দলটি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দলটি বেলা ১১টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনসহ অন্যান্যরা।