অগ্রসর রিপোর্ট : রাজধানীর সংলগ্ন সাভারে রানা প্লাজা ধসের চার বছর পূর্তি আজ। এ ঘটনায় বিপুল শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুটি মামলায় এখনো শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ। এতে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে।
মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত গুলো শুরু করতে পারেননি বিচার কাজ।
আদালতের নথি ঘেঁটে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসের সময়ে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় গত বছর। ওই বছরের ১৫ মার্চ ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহজাদী তাহমিদা মামলা দুটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং বিচারিক আদালতে বদলির আদেশ দেন।
গত বছরের ১৬ জুন ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে বজলুস সামাদ আদনানসহ তিন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই আবেদন তিনটির মধ্যে গত ১০ এপ্রিল বজলুস সামাদ আদনানের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন একটি আদালত। অন্য দুটি আবেদন এখনো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই আবেদন দুটি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে আমরা এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করতে পারব।’
আনোয়ারুল কবির বলেন, এ মামলায় আগামী ১৭ মে উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
অন্যদিকে গত বছরের ১৮ জুলাই হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে সাত আসামি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে। বর্তমানে আবেদনগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এ মামলার প্রতিটি ধার্য তারিখে সাক্ষীরা আদালতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু আসামিদের করা আবেদন উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া ৪১ আসামির মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান নামে এক আসামি ইতিমধ্যে মারা গেছে বলে তাঁর পক্ষের আইনজীবী একটি আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আসামির মৃত্যুর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ কারণে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
পিপি আরো জানান, এই মামলায় আগামী ৭ মে হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
কেমন আছেন প্রধান আসামি রানা :
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দুই মামলা প্রধান আসামি সোহেল রানা। তাঁর আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান, ‘এই মামলায় রানা গ্রেপ্তারের পর কেটে গেছে প্রায় চার বছর। এখন পর্যন্ত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত। তিনি কারাগারেই আছেন। আগামী ধার্য তারিখে আমরা বিচারিক আদালতে পুনরায় তাঁর জামিনের আবেদন করব।’
মামলার সারসংক্ষেপ :
নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের আলাদা দুই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তাঁর বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের নাম উভয় মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকায় ব্যক্তি হিসেবে আসামি ৪২ জন। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে।
এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। এ দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে এক আসামি মারা যাওয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪০।
এই মামলায় সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৩০ জন জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন সাত আসামি।
এ ছাড়া সোহেল রানাসহ তিন আসামি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ আসামির মধ্যে সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ১২ জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছে তিন আসামি।
ফিরে দেখা :
ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসে রক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং এক হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১৯ জন মারা যায়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ১৩৬ জন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাবনার বেড়ায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক আবদুস সোবহান মারা যান।
ভবন ধসের ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকার।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে ৯ তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়লে এক হাজার ১৩৬ জন পোশাক শ্রমিক মারা যান। জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে।
ঘটনার পরের দিন সাভার থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ খান অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার হেলাল উদ্দিন ইমারত নির্মাণ আইনে ১৩ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করেন।