তিনি বলেন, ‘এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের বেরিয়ে আসতে হবে। যখন যেটা বলবে সঠিকভাবেই উচ্চারণ করবে এবং বলবে।’
তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের ভাষার ওপর বার বার আঘাত এসেছে। এটাকে কখনো আরবি হরফে এবং কখনো রোমান হরফে লেখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তুু বাঙালি কখনো তা মেনে নেয়নি। এটা হচ্ছে বাঙালিদের চরিত্র, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। এ জন্যই আমরা সবসময় বলি একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করার। সেভাবে আমরা স্বাধীনতাও অর্জন করেছি এই সংগ্রামের পথ বেয়ে।’
অন্য ভাষার প্রতি তার কোনো বৈরিতা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে, নিজের ভাষা আগে শিখতে হবে । সেই সাথে অন্য ভাষাও আমরা শিখবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভুললে চলবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের কথা। ভাষা শিক্ষার মধ্যে আলাদা একটা মাধুর্য আছে। পৃথিবীতে একমাত্র মানব জাতিরই ভাষা আছে। তারাই কেবল বলতে পারে।’
তিনি বলেন ‘আমাদের ভাইয়েরা রক্ত ও জীবন দিয়ে আমাদের এই ভাষা উপহার দিয়ে গেছেন, এর মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রচলিতভাবে কথা বলতে গিয়ে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করছি সেখানে বৈচিত্র্য রয়েছে, এটা থাকবেই, এখানে উচ্চারণে আঞ্চলিকতার টানও থাকতে পারে। যেমন- আপনারা যদি জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ শোনেন তাহলে আপনারা দেখবেন গোপালগঞ্জের ভাষা তিনি (বঙ্গবন্ধু) সবসময় ব্যবহার করতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার প্রসংগে স্মৃতিচারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়ার সময় কোন কোন শিক্ষকের বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় শব্দের ব্যবহারে আপত্তির প্রেক্ষিতে বলেন, ‘এটা স্বতঃস্ফূর্ততা, এটি সংশোধান করা যায় না। এটাই মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।
বঙ্গবন্ধুর কথা বলার ধরণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি যখন কথা বলেন, জনগণের জন্য কথা বলেন। জনগণের কাছে সহজবোধ্য ভাষাটিই উনি ব্যবহার করতেন। যার মর্মার্থ জনগণ সহজেই উপলদ্ধি করতে পারবেন এবং তাদের মনে গেঁথে যাবে। যে কথাটা তাঁর জনগণের জন্য বলতে গিয়ে নিজের মন থেকে বেরিয়ে আসবে এবং জনগণের হৃদয়ে প্রোথিত হবে, সেভাবেই উনি তাঁর কথাগুলো বলতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সে জন্য কথিত ভাষায় কথা বলবো, সেটা ঠিক আছে কিন্তুু বাংলা ভাষার যে একটি প্রচলিত ধারা সেটাকে বিকৃতি করে ‘বাংরেজি’ যেনো না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রমিত বাংলা শব্দের বানান এবং উচ্চারণ সুনির্দিষ্ট। এখানে কোন আপোষ চলবে না। বাংলা ভাষাকে মিশ্রিত বা বিকৃত করে বলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তবে আঞ্চলিক ভাষাকে কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না। কারণ, আঞ্চলিক ভাষাও বাংলা ভাষা, এর নিজস্বতা রয়েছে। বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য অনুসন্ধান ও আঞ্চলিক উপ-ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ওপর আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
অতীতে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের ক্রু ও স্টাফদের বিরূপ উচ্চারণে বাংলা বলার দুর্বিষহ স্মৃতিও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসভাপতিত্ব করেন। ইউনেস্কোর ভাষা বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যানভিটা অ্যাবি অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকায় ইউনস্কো প্রতিনিধি বিট্রেস কালডুন, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এবং আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।