একই সঙ্গে হালাল খাদ্য ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুমোদনপ্রাপ্ত একজন করে আলেম নিয়োগদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে আলেম-ওলামাদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। বিদেশে বাংলাদেশের হালাল দ্রব্যের চাহিদা এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামিম মো. আফজাল এবং ইমাম ও ওলামায়ে কেরামগণের পক্ষে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ এরশাদ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-১৬ এই দুই বছরের ৬ জন শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং ২০১৪-১৫ সালের ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত দেশব্যাপী শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আলেম ও ওলামা মাশায়েখ সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন- ‘ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকে না।’ কাজেই আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতো করবোই, প্রতিটি মানুষের ঘরে যেন খাবার পৌঁছায় ইনশাল্লাহ সে ব্যবস্থাও আমরা করে দেব এবং আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেই সাথে আমাদের ইসলামের প্রচার-প্রসারে যাতে আরো উন্নত হয় তার জন্য আমরা কাজ করেছি। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। অবৈধ সরকারগুলো ইসলামের মর্মবাণী উপেক্ষা করে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে ইসলামের উন্নয়নে কাজ শুরু করি।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ৪৩টি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যে অফিস ছিল এবং যে কর্মকর্তা-কর্মচারি ছিলেন, তারা কিন্তুু রাজস্ব খাতে ছিলেন না,সরকারি কোন বেতন তারা পেতেন না। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই প্রথম ঐ ৪৩ টি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সমস্ত অফিস সরকারিকরণ করে তাদের চাকরিকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করি যাতে করে তারা সেখানে বসে ইসলাম ধর্মের প্রচারে ব্যাপক কাজ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা মানুষের সেবা করেন কিন্তু একটা সময়ে বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের দেখার কেউ থাকে না। তাদের পরমুখাপেক্ষী হতে হয়, কষ্ট করতে হয়। তাদের পারিবারিক কোন কাজ, মেয়ের বিয়ে-শাদি কোন কিছুতেই সাহায্য পাবার কোন সুযোগ ছিলো না। কাউকে এ জন্য আমাকে বলতে হয়নি, কোন দাবিও করতে হয়নি। আমি পারিবারিক শিক্ষা থেকে,নিজস্ব চিন্তা থেকে নিজস্ব উদ্যোগে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্র্রাস্ট গঠন করি। যেখান থেকে সদস্যরা চাইলে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধাও পেতে পারেন।
দেশের সকল জেলা-উপজেলায় একটি করে ইসলামী কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি সরকারের সহযোগিতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কাম ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নিয়েছি। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনসহ মহিলাদের জন্য পৃথক নামায কক্ষ, মুসলিম পর্যটক ও মেহমানদের বিশ্রামাগার থাকবে। এখানে হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইসলামী লাইব্রেরি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছি। হজের সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে। জেদ্দা হজ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া নেয়ায় হাজীদের দুর্ভোগ বহুলাংশে লাঘব হয়েছে। আশকোনা হজ ক্যাম্পে এসি ও লিফট স্থাপন করেছি ।’
ইসলামের খেদমতে জাতির পিতার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনিই আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। বাংলাদেশকে ওআইসি’র সদস্য করেন,বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুই জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তেলওয়াতের ব্যবস্থা করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), শবে কদর ও শবে বরাতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করেন।
দেশে ইসলামের প্রসারে জাতির পিতার উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ব ইজতেমার জায়গা ও কাকরাইল মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী কওমী মাদরাসার জন্য জমি বরাদ্দ করেন। হজযাত্রীরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে হজ করতে পারেন, এজন্য ‘হিজবুল বাহার’ নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেন। যা পরবর্তীকালে জেনারেল জিয়া প্রমোদতরীতে পরিণত করে।
‘জিয়াই দেশে মদ ও জুয়ার অবাধ লাইসেন্স প্রদান করেছিলেন’, অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।