তাহলে এখন কি মোবাইল নাম্বারও নিরাপদ নয়?
সাম্প্রতিককালে সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার থেকে কল যায় বিভিন্ন নম্বরে। অফার দেয়া হয় টাকার বিনিময়ে নানা সুবিধার। কেউ কেউ টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন আবার কারও কারও মনে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহেরও জন্ম দেয়।
একসময় অভিযোগ আসে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের কাছে এবং তাদের তদন্তে উঠে আসে মোবাইল নাম্বার জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেবার অভিনব উপায়।
র্যাব -৪ এর অধিনায়ক বলেছেন, এ ধরনের জালিয়াতির সাথে জড়িত ১৪ জনকে সহায়ক নানা উপকরণ সহ আটক করেছেন তারা।
কিন্তু কিভাবে একজনের মোবাইল নাম্বার তার অগোচরে নকল করে আরেকজন ব্যবহার করতে পারে ?
জবাবে র্যাব -৪ এর অধিনায়ক মিস্টার লুৎফুল কবীর বলেন আগে সিম ক্লোন করতো আর এখন শুধু নাম্বারটা ক্লোন করে ফলে সিমের মালিক টেরই পায় না।
‘এটা ডেডিকেটেড সার্ভার প্রভাইডার দিয়ে করা হয়। আমেরিকা হয়ে বাংলাদেশের গেটওয়ে দিয়ে এই নকল নাম্বার দিয়ে কল বাংলাদেশে ঢুকে’।
তিনি বলেন যারা পরিচালনা করে তারা প্যাকেজ আকারে এটা বিক্রি করে। যার একটা স্মার্ট ফোন আছে সে অ্যাপস ডাউনলোড করে নিতে পারে। মোবাইল ফোনে ইনস্টল করে নিলে সহজভাবেই নাম্বার নকল সম্ভব।
কিন্তু মিস্টার কবীরের সাথে পুরোপুরি একমত নন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির।
তিনি বলেন অপারেটরদের মধ্য থেকে কারও সহায়তা ছাড়া এটা করা সহজ হওয়ার কথা নয়। আর গেটওয়ে অপারেটরদেরকে অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে কলটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাদেরকেও এ ধরনের জালিয়াতি নাম্বার থেকে কল আসা প্রতিরোধে সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোনের চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হাসান বলছেন এখানে অপারেটরদের তেমন আর কিছুই করার নেই।
তিনি বলেন ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরদের বরং আরও পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে প্রায় চার বছর আগে মোবাইল সিম ক্লোন হচ্ছে অর্থাৎ একই নাম্বারের আরেকটি সিম জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মানুষকে সতর্ক করার উদ্যোগ নিয়েছিলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপি।
বেশ কিছু পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ফোনে অন্য প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের নম্বর থেকে ফোন করে নানা আদেশ নির্দেশ দেয়ার ঘটনা তদন্ত করে তখন সিম নকলের প্রমাণ পেয়েছিলো পুলিশ।
অপারেটর ও বিশেষজ্ঞসহ এ খাতের অনেকেই মনে করেন অ্যাপস বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে সিমের মতো মোবাইল নাম্বার নকল প্রতিরোধে মূল ভূমিকা রাখতে হবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই।
আর তাদের এটি করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত সহায়তা নিয়েই।
আর এটি করা সম্ভব হলেই নিরাপদ থাকবে মোবাইল নাম্বারগুলো, বন্ধ হবে নিজের অগোচরে মোবাইল নাম্বার অন্যের ব্যবহারের সুযোগ। সূত্র: বিবিসি বাংলা