খুলনা প্রতিনিধি- গত এক বছরে খুলনায় র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সুন্দরবনে গত ৫ অক্টোবর ১৩ জন এবং ৯ আগস্ট ছয়জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহতদের মধ্যে ২৬ জনই বিভিন্ন দস্যু বাহিনীর প্রধান ও সদস্য। বাকি পাঁচজন নিষিদ্ধ চরমপন্থী দলের সদস্য। জানা গেছে, খুলনার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বছরের মার্চ থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযান চলাকালে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আটবার বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ১৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে গত ৫ অক্টোবর খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়।
খুলনা জেলা পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, পাইকগাছা উপজেলার জিরবুনিয়া গ্রামে অধ্যাপক প্রশান্ত ঢালীকে জলদস্যু-বনদস্যু কাশেম বাহিনীর ১৩ সশস্ত্র সদস্য তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে। তাত্ক্ষণিকভাবে পুলিশি অভিযানে তাকে উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ৫ অক্টোবর উদ্ধার অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে দুদফা বন্দুকযুদ্ধে সবুর মোড়ল, মো. হানিফ গাজী, আফজাল ওরফে আলিম মোল্লা, আখিরুল ওরফে আমিরুল শেখ, আফজাল শেখ, মাহাবুব মোল্লা ওরফে ইব্রাহিম, মহসিন ওরফে মফিজুল মোল্লা, শফিকুল শেখ, নাসরুল শেখ, রুবেল শেখ, জুনায়েদ খান, কারিমুল ইসলাম শেখ ও হাবিবুর রহমান ওরফে আজিবুর নামের ১৩ বনদস্যু নিহত হন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বেশ নড়েচড়ে বসে। বিভিন্ন মহলে চলে আলোচনা-সমালোচনা আর বিতর্ক। কিন্তু ঘটনার কোনো তদন্ত না হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। সর্বশেষ ৯ আগস্ট কয়রা উপজেলার মাদারবাড়িয়া খালের উত্তর পাশে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আনসার সানা, সিদ্দিক সানা, বাপ্পি হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মজিদ গাজী ও মামুন গাজী নিহত হন।
পুলিশের দাবি, নিহতরা বাঘ শিকারি ও বনদস্যু বাহিনীর সদস্য। খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, খুলনায় চরমপন্থী ও জলদস্যুদের তৎপরতা ছিল। সন্ত্রাসীরাও মাথাচাড়া দিচ্ছিল। জেলা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে তাদের দমন করা হয়েছে। এ সময় বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন বনদস্যু নিহত হয়েছে। বর্তমানে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এ অবস্থা অব্যাহত রাখা এবং খুলনা জেলাকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে অভিযান আরো জোরদার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, সুন্দরবনে বনদস্যু ও বাঘ শিকারির সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে অনেক দস্যু বাহিনী প্রধান ও তাদের সহযোগীরা নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের আরো অসংখ্য সদস্য রয়ে গেছে। অনেককেই এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ফলে তারা এখন পেশা পরিবর্তন করে বাঘ শিকারে লিপ্ত হয়েছে।