আখেরি মোনাজাতে লাখো মুসল্লি চোখের পানিতে খোদার দরবারে জিন্দেগানির গুনাহ মাফের ফরিয়াদ জানান। মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিশ্ব উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হয়।
৩৪ মিনিট স্থায়ী আখেরি মোনাজাত চলাকালে ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় ‘আমিন’-‘আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় নত হয়ে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মুসল্লিরা মনের আকুতির কথা জানান।
নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে মুসল্লিদের হেফাজত করার জন্য, বিশ্ববাসীর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন মাওলানা সা’দ।
এ সময় ইজতেমা ময়দানে সঙ্গে একত্ব হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, দোকানের বেঞ্চে বসে, ট্রেন স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড থেকে যে যেখানে ছিলেন সেখান থেকেই মোনাজাতে শরিক হন।
আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নিতে হেঁটে ইজতেমাস্থলে পৌঁছান মানুষ।
মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে সকাল সাড়ে ৯টার আগেই। যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাজারো মুসলমান ভোরে পায়ে হেঁটেই রওনা হন টঙ্গীর পথে। অনেকে যানবাহনের বিড়ম্বনা এড়াতে দুই-একদিন আগেই টঙ্গীতে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি কিংবা হোটেলে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। আর ১৭ জেলা থেকে আসা কয়েক লাখ মানুষ গত ৩ দিন ধরে অবস্থান করছেন ইজতেমা মাঠে নির্ধারিত খিত্তায়।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, এবার ইজতেমার দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের ১৭ জেলার মানুষ ছাড়াও যোগ দিয়েছেন ৯৫টি দেশের ৬ হাজার ৩৬০ জন।
আখেরি মোনাজাত শেষে টঙ্গী থেকে সবার বাড়ি ফেরার সুবিধার জন্য ১৪টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সবাই বাড়ি ফেরা পর্যন্ত কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য ইজতেমা মাঠের আশপাশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী জংশন দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেন যাত্রাবিরতি দিচ্ছে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে এ জংশন দিয়ে ১৪টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে। এ ছাড়া বিআরটিসির ২২৮টি বাস যাতায়াত করছে।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি ভোরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ওই পর্বে অংশ নেন ঢাকাসহ ১৭ জেলার মুসলমানরা।
চার দিন বিরতি দিয়ে ঢাকা ছাড়াও আরো ১৫ জেলার মুসলমানদের অংশগ্রহণে ২০ জানুয়ারি শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যামে শেষ হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের এই বার্ষিক সম্মিলন।