বেলা ১১টা ২ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় ১১টা ৩৫ মিনিটে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ।
আখেরি মোনাজাতে মহান আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, হেফাজত, রহমত, মাগফেরাত, নাজাত, ঐক্য, শান্তি এবং দেশ ও মানবতার কল্যাণ কামনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের পাপের ক্ষমা, সঠিক পথের দিশা চেয়ে এবং তাবলিগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তওফিক কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।
মাওলানা সাদের বিনম্র সুরে মোনাজাতের সময় ‘আমিন’, ‘আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি তোলেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। কেঁদে কেঁদে দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে আকুতি ব্যক্ত করেন ধনি-দরিদ্র, শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ।
এর আগে রবিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। দিল্লির মাওলানা সাদ এ হেদায়েতি বয়ান করেন। ইজতেমার মুরব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন এই তথ্য জানান।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার ভোর রাত থেকেই মুসল্লিদের ঢল ছুটেছে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ছাড়াও আশপাশের জেলার মুসল্লিরা গতকাল রাত থেকেই ইজতেমা ময়দানে আসছেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আশপাশের মহাসড়ক-সড়কে (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকা রেডিসন হোটেল পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ স্টেশন রোড থেকে মীরেরবাজার পর্যন্ত, আশুলিয়া সড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল সড়ক পর্যন্ত) গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সব সড়ক দিয়ে রবিবার ভোর থেকে মুসল্লিরা হেঁটে দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসছেন। ময়দানের চারদিক দিয়েই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসছেন। কেউ ময়দানে গিয়ে নিজের এলাকা থেকে আসা তাবলিগ জামাতের সাথীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট খিত্তায় গিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন।
আবার অনেকেই ইজতেমা ময়দানের আশপাশ এলাকার সড়ক-মহাসড়কে হোগলাপাতার পাটি, পলিথিন, খবরের কাগজ বিছিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন। মুসল্লিদের পদচারণায় বিসিক শিল্প নগরী টঙ্গী যেন পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। আখেরি মোনাজাত শুরুর আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।
শনিবার বাদ ফজর থেকে আল্লাহ পাকের অশেষ মহিমায় আবেগ-অপ্লুত লাখো মুসল্লির কণ্ঠে উচ্চারিত ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠছে তুরাগ নদের তীর। অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন হাজার হাজার মুসল্লি।
বিশ্ব ইজতেমা প্রথম দফায় ৩ দিনব্যাপী মুসলিম বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েতের আখেরি মোনাজাতে শামিল হওয়ার জন্য শনিবার থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নরসিংদী, ভৈরব, সাভার, মানিকগঞ্জ, কালিয়াকৈর,কালীগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইজতেমা ময়দানে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, কার এবং নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে ইজতেমা ময়দানে আসছেন।
উল্লেখ্য, টঙ্গীর তুরাগতীরে গত শুক্রবার শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বে দেশের ১৭টি জেলার মুসল্লিরাসহ বিশ্বের প্রায় ৯২টি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছে। আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। পরে চার দিন বিরতি দিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। আর ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব।