নিজস্ব সংবাদদাতা- অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রায় ১০০টি দফতর ৯০ দিনের মধ্যে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কের (ওয়ান) মাধ্যমে সংযুক্ত করতে চায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। একই সময়ে ১৫৬ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করবে সংস্থাটি। ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে বিদ্যমান ৪০ জিবিপিএস সঞ্চালন লাইনকেও এ সময়ে ২৪০ জিবিপিএসে উন্নীত করবে বিটিসিএল। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দেয়া ৯০ দিনের কর্মপরিকল্পনায় সংস্থাটি এ কথা জানিয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৯০ দিনের কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) নিজেদের কর্মপরিকল্পনা জমা দিয়েছে। নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় সংস্থাটি ইন্টারনেট সংযোগ বিস্তার ও বকেয়া রাজস্ব আহরণে প্রাধান্য দিয়েছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় বিটিসিএল চলতি মাস থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ১২টি কাজের উল্লেখ করেছে। এতে সংস্থার পাওনা ১৫৬ কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বিস্তারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ প্রসঙ্গে জানান, ৯০ দিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে। বিটিসিএল ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাকাউন্ট অফিসার (ডিএও), চিফ অ্যাকাউন্ট অফিসার (সিএও) ও মিডল টার্ম বাজেট ফ্রেমের (এমটিবিএফ) প্রায় ১০০টি দফতর ওয়ানের মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে সংযুক্ত করা হবে।
সংস্থার পরিকল্পনায় আরো রয়েছে, এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫০টি স্থানে যন্ত্রপাতি এবং ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপন। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪০টি স্থানে ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি ও ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপনের কথাও কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রি-পেইড সার্ভিস (পিপিএস), প্রি-পেইড টেলিফোন (পিপিটি) ও ফ্রি ফোন সার্ভিস (এফপিএস) সেবা দিতে ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক (আইএন) চালুর পরিকল্পনা জানিয়েছে বিটিসিএল। একই প্রকল্পের আওতায় গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রায় ৯ হাজার ৮৩০ গ্রাহকের জন্য জিপিওএন-ভিত্তিক এফটিটিএক্স সিস্টেম চালু করতে চায় বিটিসিএল। এতে এসব গ্রাহক একই লাইনে ট্রিপল প্লে (ভয়েস, ডাটা ও ভিডিও) সার্ভিস পাবে।
উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে উচ্চগতির ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবা বিস্তৃত করতে বিটিসিএল ৯০ দিনের মধ্যে সব সাইটের জরিপ শেষ করতে চায়। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকের মাধ্যমে এ জরিপ সম্পন্নের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথ বহনের জন্য ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে বিটিসিএল ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের (প্রটেকশন) অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান ৪০ জিবিপিএস ক্ষমতার অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন লিংককে ২৪০ জিবিপিএস ক্ষমতায় রূপান্তর করবে বিটিসিএল। পাশাপাশি ভারতে ১০ জিবিপিএস সাবমেরিন ব্যান্ডউইডথ রফতানি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কক্সবাজার-আখাউড়া লিংক (প্রটেকশনসহ) ৯০ দিনের মধ্যে চালু করতে চায় বিটিসিএল।
৯০ দিনের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিজেদের বিভিন্ন আয়-ব্যয় দফতরকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত করে কম্পিউটারাইজড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম চালু করতে চায় বিটিসিএল। এছাড়া সংস্থার ওয়েবসাইট আপডেট এবং স্থানীয় রাজস্ব ও বৈদেশিক রাজস্ব মিলিয়ে মোট ১৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া আইসিটি বিভাগের ইনফো সরকার প্রকল্পের জন্য ছয়টি বিভাগ থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪০৮ জিবিপিএস, জেলা থেকে বিভাগ পর্যন্ত ৫ দশমিক ৯২৮ ও প্রতিটি উপজেলা থেকে জেলা পর্যন্ত ৮ এমবিপিএস করে মোট ২৫৫টি উপজেলার জন্য ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি।