জি এম লিটন- কোন প্রয়োজন ছিল না, যুদ্ধের ফলাফল নির্দিষ্টই হয়ে গিয়েছিলো ততোদিনে” অথচ ভয়ঙ্কর কুৎসিত বোমা দুটো ফাটালো আমেরিকা” কবিরা রাজনীতি করে কিনা কিংবা রাজনীতির আলোচনা নিয়ে মত্ত হয় কিনা সেটা বিষয় নয়, বিষয় হলো কবি যেমন ভালবাসতে পারে” তেমনি তার ঘৃণার প্রকাশও ঘটে প্রবলভাবে”একটি অদ্ভুত বই কবি উত্তম কুমার বড়ুয়ার ’পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই’” এ কারণে অদ্ভুত বলা যে, কবিতার কোন কোন পাঠক বিজ্ঞানী হতেই পারেন, কিন্তু সকল পাঠক অথবা বলা যায় অধিকাংশ পাঠকই বিজ্ঞানের খুব অল্পই জানেন” কিন্তু ’পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই’ বইটিতে আমরা দেখছি আণবিক বোমার স্বত্বরিত বা স্বতঃস্ফূর্ত বিগলন প্রক্রিয়া, একটি সরলতম আণবিক বোমার নক্সা, হাইড্রোজেন বোমার নক্সা এমনি অনেক সচিত্র বর্ণনা” দেখছি জাপানের নাগাসাকিতে আণবিক বোমায় আহত স্তন্যপানরত শিশু, দেখছি হরর ছবির দৃশ্যের মতো ভয়াবহ ঝলসানো মানুষের শরীর” আর দেখছি সেই দুটো কুৎসিত বোমা” কেন দেখছি? এ কারণে যে আমরা কবিতার পাঠক, কবিতা ভালবাসি” ভালবাসি ফুল, পাখি, মুক্ত আকাশ, বেঁচে থাকা” আমাদের প্রতিবাদ হয়তো অতটা সোচ্চার নয়, আমাদের উচ্চারিত সতর্কবাণী হয়তো অতটা ফলদায়ক নয়, তবু আমরা শুভবুদ্ধির পক্ষে আছি” উত্তম কুমার বড়ুয়া তেমনই উচ্চারণ করেছেন তার কবিতায়”
’হে মানব, ব করো
তোমার সিএফসি ব্যবহার; জীবাশ্ব আণব জ্বলন
নয়তো তোমার হাসি প্রতিস্হাপন করে
আমার কান্নাই দ্রুত সঞ্চারিত হবে সর্বত্র”’
বইটিতে আছে আঠারটি কবিতা” মাত্র আঠারটি কবিতা” খুব ছোট ছোট কবিতা, এক পৃষ্ঠা, অর্ধ পৃষ্ঠার মধ্যে জায়গা করে নেওয়া কবিতা” আঠারোটি কবিতা নিয়ে একটি বই কেন, আমি এই প্রশ্ন করি আমাকে” আমি উত্তর দিই আমাকেই তোমাকে আপাততঃ আর কোন কবিতা পড়তে দেবো না” কেন না উনিশের বলয়ে এসে তুমি দুদুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখেছ” কেন না বিশে এসে তুমি মোটেই শুধরে নাও নি নিজেকে, একুশ তোমার সামনে ধোয়াশাচ্ছন্ন” ভাল, আমিও চাই এমনি প্রতিবাদ হোক” বইয়ের অর্ধেক পৃষ্ঠা জুড়ে থাক যুদ্ধের ক্ষত বিক্ষত পটভূমি, বাকী অর্ধেকে ছাপা থাক কবিতার পংতি”
’তোমরা কি আমাকে নিঃশঙ্ক চিত্তে প্রেমের
কথাবলী লিখতে দেবে না!
দেবে না কি প্রিয়া পুত্র কে সুখ শান্তি দিতে”’
যুদ্ধের বোঝা মাথায় নিয়ে কবি কোথায়ও এমনি সরল জিজ্ঞাসা রেখেছেন, কোথাও আবার ঝলসে উঠেছেন শান্তির সপক্ষে”
’দীর্ঘদিনের পর হলেও আমি জানতে চাই
কি অপরাধ ছিল হিবাকুশাদের
ট্রুম্যানের ফ্যাট, লিটল বয়দের কাছে”’
কিংবা,
’হে জ্ঞান বৃদ্ধ পাপী, আমার দীপ্ত আহ্বান তোমার প্রতি
তুমি অন্ততঃ মানবতাকে বিপন্ন করতে পারো না
পারো না বিধ্বংসী অস্ত্র বানাতে জীবন ভর
আর পারো না তীব্র ভয়ঙ্কর পৃথিবী নাশী
আরো এল নিনোর জন্ম দিতে”’
কিন্তু এই কবি প্রায়ই তার কবিতায় খুব সরল হয়ে যান, বিবৃতি দাতা হয়ে যান” এটা কি সর্বগ্রাসী পারমাণবিক শক্তিমত্ততার বিরুদ্ধে কবির অসয়াত্ব ? বাস্তবতা ? নাকি কবি যুদ্ধের বিরুদ্ধে ঘৃণাই উচ্চারণ করে যাবেন কেবল ধর্ষনোদ্যত পুরুষের সামনে যেভাবে নারীর ঘৃণা প্রকাশিত হয়, সেভাবে?
কিন্তু কবিকে ভুললে চলবে না শুভ শক্তি আছে কবিতার পক্ষে” চির কাল ধরে আছে, থাকবে” সেই শক্তি এল নিনোর চেয়ে ক্ষমতাবান, হাজারটা পারমাণবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালী” তার প্রকাশ সৌন্দর্যে, সুন্দরে, সহজ আকাশের নীলে, এমন কি অকার রাতের তিমির নিবির আহ্বানেও” কবিকে ধন্যবাদ এমন একটি বই উপহার দেওয়ার জন্য”
