স্টাফ রিপোর্টার: আগামীকাল থেকে শুরু হবে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬’। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন বিকেল ৩ টায় বাংলা একাডেমি চত্বরে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বাঙালির প্রাণের এ মেলা। তিনি পরে মেলাচত্বর পরিদর্শন করবেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান আজ বাসসকে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে দু’শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে র্যাবের দু’টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ ও পাশ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে বলেও তিনি জানান।
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের আটটি পথ থাকবে। মহাপরিচালক বলেন, এবারই প্রথম সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে।
গ্রন্থমেলার সব প্রবেশ ও বর্হিপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থারসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। তাই এবার মেলা প্রাঙ্গণে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।
বাংলা ভাষার বিদেশী দুই গবেষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, তারা হলেন যুক্তরাজ্যের কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার এবং চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক ও গবেষক রিবেক মার্টিন। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন ও জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আধুনিক বাংলা অভিধান তুলে দেয়া হবে।
এবারের গ্রন্থমেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’। এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক জানান, ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসের আদলে মেলায় বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ান নির্মাণ করা হয়েছে। ৪০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায়ও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটি বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী স্মারক বর্ধমান হাউসের আদলেই নির্মাণ করা হয়েছিল।
প্রায় দ্বিগুণ পরিসর নিয়ে এবারের মেলার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে শামসুজ্জামান খান জানান, এবছর বাংলা একাডেমি ও একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের ৪ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট এলাকা নিয়ে গ্রন্থমেলার স্টল বিন্যাস করা হয়েছে। গতবছর এ আয়তন ছিল প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট।
তিনি বলেন, একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিটসহ মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫১টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১৫টি প্যাভিলিয়নের স্থান দেয়া হয়েছে। যার মোট আয়তন ৬ হাজার বর্গফুট। গতবছর ১১টি প্যাভেলিয়নসহ ৫৬৫টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানিয়ে একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন, তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে।
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০% কমিশনে বিক্রি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন ছাড়াও একাডেমি প্রকাশিত অভিধান বিক্রয়কেন্দ্র, একাডেমির শিশুকিশোর প্রকাশনাভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্র এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার’এর বিক্রয়কেন্দ্র মেলায় থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সজ্জিত করা হয়েছে উল্লেখ করে একাডেমির কর্ণধার জানান, চত্বরগুলো নামাঙ্কিত থাকবে ভাষাশহিদ আবুল বরকত, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, শহিদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ডা. আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, শিশুসাহিত্যিক সাজেদুল করিম, হাবীবুর রহমান, ফয়েজ আহ্মদ এবং রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’র নামে।
এবার শিশুকর্নার মেলার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিশুকিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহ যেন বইমেলায় ক্রয়-বিক্রয়ের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে।
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। শামসুজ্জামান খান জানান, মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করা হবে বলেও তিনি জানান।
২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে একাডেমির ইতিহাস এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক কর্মকান্ড, অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ঐতিহাসিক ৬ দফার সুবর্ণজয়ন্তী এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে বলেও তিনি জানান।
শামসুজ্জামান খান জানান, গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন এবং মেলার মূল মঞ্চে ২টি অধিবেশনে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলা ও বিশ্বকবিতা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্লোভাকিয়া, মরক্কো, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজন্মের কবিবৃন্দ কবিতা পাঠ করবেন।
গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে তিনি জানান।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।