স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনে তাঁর দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের সরকারের বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা আশা করি শিগগিরই সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি সাক্ষরতার হার শতভাগ অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো উন্নয়নে সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে এখানে মদনমোহন কলেজের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণদারকালে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী ও কলেজের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য শুখেন্দু বিকাশ দাস বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে হীরক জয়ন্তী বক্তৃতা দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. হারুন-অর রশিদ। অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য এডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ, কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও প্রাক্তন ছাত্র বিজিত চৌধুরী, কলেজ স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ এবং হীরক জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর আবুল ফজল স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাখাতের অধিকতর উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এজন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমাদের সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ৭টি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের পরিকল্পনার ভিত্তিতে সিলেটেও অনুরূপ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।
পিতার নামে মদনমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী মদনমোহনের যোগ্য সন্তানদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে এই বিভাগীয় শহরের সব মহলের দাবির প্রেক্ষিতে কলেজটি সরকারিকরণের ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, সবারই একটি দাবি, আর তা হচ্ছে কলেজটি সরকারিকরণ করা এবং অর্থমন্ত্রীর এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমি মনে করি যেখানে অর্থমন্ত্রী আছেন সেখানে কলেজটি সরকারিকরণে কোন সমস্যা হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক প্রক্রিয়া হিসেবে শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নতুন স্কুল ও কলেজ নির্মাণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ও পুড়িয়ে দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করেন। পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণ করেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই জাতির পিতার নির্দেশিত পথে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশ এবং স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো লিটারেসি এ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
তবে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালে সাক্ষরতার হার কমে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশ। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশ।
শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ৭ বছর ধরে বিনামূল্যে ১৯৩ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ করেছে। আমরা চলতি বছরের ১ জানুয়ারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৩,৩৭,৬২,৭৭২ পাঠ্যবই বিতরণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক থেকে ডিগ্রি পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ১.২২ কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। আমরা ২৬,১৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি ১.২০ লাখ প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রথমবারের মতো উচ্চ শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমন্বিত শিক্ষা নীতি-২০১০ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার সকল স্তরে তথ্য-প্রযুক্তি সংযুক্ত করার মাধ্যমে আইসিটি এডুকেশন শিরোনামে একটি পরিকল্পনার আওতায় প্রতি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল এবং প্রতিটি বিভাগে একটি মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য তাঁর সরকার ৮২,৭২৫ শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭,৫২.৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় জঞ্জুরি কমিশনকে উচ্চ শিক্ষা কমিশনে পরিণত করার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে এবং উচ্চ শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য এক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।