অগ্রসর রিপোর্ট: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ৯ আবাসিক হলের মধ্যে চারটি হল থেকে পেট্রোল বোমাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ছাত্রদের ৪টি আবাসিক হলে শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে হলভিত্তিক টিম গঠনের মাধ্যমে এই অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে মঙ্গলবারে একটি হলে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।জানা যায়, গত ১৭জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইদিন দুপুর তিনটার মধ্যে আবাসিক হলসমূহ ফাঁকা করার নির্দেশ দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এরপর গত ১২ আগস্ট থেকে হলসমূহ খুলে দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ১৪ আগস্ট থেকে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খুলে দেয়ার পর হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি হলে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সমন্বয়ে হলভিত্তিক টিম গঠন করা হয়েছে। বুধবার দুপুর দুইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৩টি হলের রুমে রুমে তল্লাশি চালানো হয়।
এ সময় বিভিন্ন রুম থেকে সামুরাই, প্লাস্টিক পাইপ, বাঁশের লাঠি, রড, হকিস্টিক, হেলমেট, স্টাম্প, করাত, দা, চেইন, পেট্রোল বোমার মতো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি মদের বোতল এবং গাঁজার কলকি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত বিভিন্ন রকম দেশীয় অস্ত্র ছিলো ১০৩৫টি। প্রায় ৫০টির মতো হেলমেটও জব্দ করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের একটি অংশ (নূর হোসেন ব্লক) থেকে ৪টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের মধ্যে মারামারি কিংবা সংঘর্ষের সময় এগুলো ব্যবহার করা হতো বলে ধারণা করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয়টির শেখ রাসেল (নুর হোসেন) হলে ৯৬টি সামুরাই, দুটি হকিস্টিক, ৯২টি রড, ১৫৭টি এসএস পাইপ, ২৫৭টি বাঁশের লাঠি, তিনটি মদের বোতল, ১৬টি হেলমেট, একটি চেইন, চারটি প্লাস্টিক পাইপ, চারটি পেট্রোল বোমা এবং কিছু মাদক সামগ্রী পাওয়া যায়।
শেখ রাসেল (এক্সটেনশন) হল থেকেও ২৩টি সামুরাই, পাঁচটি দা, ৪৮টি রড, ৪৫টি পাইপ, সাতটি হকিস্টিক, ২৭টি লাঠি, ১১টি মদের বোতল, ২৩টি হেলমেট, একটি গাঁজার কল্কি উদ্ধার করা হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলে তল্লাশি করে নয়টি সামুরাই, ৫৫টি এসএস পাইপ, ৪০টি বাঁশের লাঠি, ৩৬টি বাঁশ এবং কাঠের লাঠি, ৭২টি রড এবং প্লাস্টিকের চিকন পাইপ, দুটি হেলমেট, ১টি ব্যবহৃত মদের বোতল এবং কিছু মাদক সামগ্রী গ্রহণের উপকরণ পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তল্লাশি চালিয়ে ১৮টি সামুরাই, ৭১টি এসএস পাইপ, ১৮টি বাঁশের লাঠি, ১১৩টি লোহার রড, ১৩টি হকিস্টিক, ১৫টি লাঠি, আটটি প্লাস্টিক পাইপ, দু’টি হেসকো ব্লেড, ১টি ডেগার, পাঁচটি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার অভিযান প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এই অভিযান চালানো হয়েছে এবং প্রতিটি হল থেকে হাসুয়া, রামদা, রড, এসএস পাইপ পাওয়া গেছে। উদ্ধার অভিযান শেষ করার পর এসব জব্দকৃত অস্ত্রসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান মারফত সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য হলসমূহ ১৪ আগস্ট বিকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিটি হলের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সমম্বয়ে হলভিত্তিক টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমি কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবাসিক হল খোলার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের একপর্যায়ে হল খোলার আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা উঠলে সবার মতামতের ভিত্তিতে আবাসিক হলগুলোতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার তাজউদ্দীন আহমেদ আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে ছয়টি সামুরাই, ১৪৩টি বাঁশের লাঠি, ১৬টি রড, ২২টি লোহার পাইপ, দুটি লোহার চেইন, তিনটি খালি মদের বোতলসহ মাদক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।