স্টাফ রিপোর্টার: আগামীকাল বুধবার ২৩৪ পৌরসভায় একযোগে শুরু হবে ভোট। সকাল ৮ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৩৪ পৌরসভায় টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।প্রায় ১২ হাজার প্রার্থী এই নির্বাচনে লড়বে।এর মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৯৪৫ জন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ আজ বাসস’কে বলেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ ১ লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সঙ্গে রয়েছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
কমিশনের শেষ মুহূর্তের নির্দেশনায় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল পাঠাতে বলা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২২৯টি পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাকি ৬ উপকূলীয় পৌরসভায় কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পৌরসভা এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি-র্যাব-কোস্টগার্ড ও পুলিশ। ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট দেয়া, ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সূত্র জানায়, ভোটের দিন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ নির্বাচনে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা নির্বাচনী মাঠে থাকছে। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ন আনসার সার্বক্ষণিক থাকছে। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকছে। এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বে ও অপরাধ দেখভালে মাঠে থাকছে সর্বমোট ১ হাজার ২০৪ জন নির্বার্হী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এ নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ২১ হাজার ৫৭১টি। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৫৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণ করবেন মোট ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা। এ নির্বাচনে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন। ইতোমধ্যে মেয়র পদ, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের ব্যালট পেপার, সিল, ফরম প্যাকেট ও অন্যান্য নির্বাচন সামগ্রী নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছেছে। আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোঁছে যাবে সব মালামাল। এসব পৌরসভায় ৩ হাজার ৫৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ১৮৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসি।
নির্বাচনের কারণে ২৩৪টি পৌরসভায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে নির্বাচনী এলাকায় সকল অফিস বন্ধ থাকবে।
সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। ফলে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি আজ কোন ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এখন ঘরে বসে শুধু প্রার্থীদের হিসাব-নিকাশ মেলানোর পালা।
সোমবার রাত ১২টার মধ্যেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী আরো চার দিন বৈধ লাইসেন্সধারীদের সবধরনের অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের গ্রেফতার ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকায় আজ রাত থেকে শুরু করে মোট ৪৮ ঘণ্টা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ দিবাগত মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২ টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় গত ২৭ ডিসেম্বর রাত ১২ টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত মটর সাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসি ও রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯৪৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছে ১১ হাজারের বেশি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার ভোটে মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে নৌকা-ধানের শীষ নিয়ে ২২২ প্রার্থী। নারী মেয়র প্রার্থী ২০ জন ভোটে রয়েছে। ২০টি দল অংশ নিচ্ছে । এর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৮৮ জন। অবশ্য ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ২২৮ জন ও বিএনপির ২২৫ জন ও জাতীয় পার্টির ৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে।
মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ দুই প্রধান দল কয়েকটি পৌরসভায় মুখোমুখি না থাকলেও শরিকদের সঙ্গে লড়বে। নির্বাচনে অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এছাড়া এলডিপি ১ জন, জেপি ৬ জন, সিপিবি ৪ জন, ন্যাপ একজন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ জন, বিকল্পধারা ১ জন, জাসদ ২১ জন, বাসদ একজন, তরিকত ফেডারেশন ১ জন, এনপিপি ১৭ জন, পিডিপি একজন, ইসলামী ঐক্যজোট ১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন, খেলাফত মজলিসের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।
ইতোমধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।