দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রায় চার মাস হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। অসহায়-ছিন্নমূল ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরনের মধ্যদিয়ে পবিত্র রমজানজুড়ে মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে দলটির তৃণমূল ও হাইকমাণ্ডের নেতারা।
এরআগেও মহামারি করেনোয় মানুষের জন্য ‘মানবিক কর্মকাণ্ড’ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। দেশের জন্য নিজেদের উজাড় করে দেবে প্রতিটি নেতা-কর্মী।
শপিংয়ের টাকা কর্মহীনদের দান করুন: ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে অসহায়-নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই প্রথম রমজান থেকে শুরু করে অদ্যবধি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা করছে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের প্রায় সব নেতাই মানবিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং আওয়ামী লীগের ঈদসামগ্রী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঈদে শপিং না করে গরিব অসহায় ও কর্মহীনদের মাঝে অর্থ বিতরণ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এবার ঈদ এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন বাস্তবতায়, দেশ পার করছে সংকট কাল। এ পরিস্থিতিতে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঈদের শপিং না করে এর অর্থ অসহায়, দরিদ্র কর্মহীন জনগণের মাঝে বণ্টনের আহ্বান জানান কাদের। পাশাপাশি ঈদের কেনাকাটায় সংযম ও পরিমিতিবোধ বজায় রাখার জন্য বিত্তবান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর রাজধানীর রমনা কালী মন্দির ও আশপাশের এলাকার অসহায় দুস্থদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ। দলের আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
ঈদ সামগ্রী ও ইফতার বিতরণ কার্যক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা-১ দোহার নবাবগঞ্জের এমপি সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান) এমপি। প্রতিদিনের মতো গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার ও ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন ঢাকা-৮ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। নিজস্ব উদ্যোগে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের ৭০০ পরিবারের মাঝে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। শনিবার নরসিংদী জেলার মনোহরদী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে প্রান্তিক এসব পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রতিদিনই অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরন করছেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মশিউর রহমান মোল্লা সজল।
৬ এপ্রিল দুপুরে ৬২ নং ওয়ার্ডে ৮ হাজার গরিব ও মেহনতী অসহায় পরিবারের মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ মশিউর রহমান মোল্লা সজল এমপি। ভবিষ্যতেও এই ধরনের সামাজিক এবং সেবামূলক কর্মকাণ্ড সব সময় অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
একই সাথে সমাজের বিত্তবানদের মানবিকতার স্বার্থে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান সজল মোল্লা। একইভাবে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপি এবং কাউন্সিলর- মেয়ররা অসহায় মানুষের পাশে সহরযাগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পযর্ন্ত আমাদের অনেক নেতা-কর্মী রমজান মাসজুড়ে গরীব-দু:খি মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে আসছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, এদেশে একমাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সব সময়ে গরীব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, করোনার সময় যখন মানুষ ঘর থেকে বের হয় নাই, মানুষের ধান কাটার জন্য লোক পাচ্ছে না, তখন শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগ, ছাত্রলীগ করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। তখন যদি এই মানবিক কাজগুলো আমাদের আওয়ামী লীগের সংগঠনগুলো না করতো তাহলে মানুষগুলো সমস্যায় পড়ে যেতো।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঈদে স্বজন ও আপনজন তথা জনগণের প্রতি যে আবেগ থাকার কথা তার কোনোটারই আমাদের কমতি নেই। একজন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং করছি। তিনি বলেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে বার্তা দিয়েছেন তা তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি নির্দেশনা অক্ষরে অক্সরে আমরা পালন করে চলেছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও দলীয় উপহার সুষ্ঠুভাবে অসহায় মানুষগুলো কাছে পৌছে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছিলো ঠিক তখনই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যার কঠিন প্রভাব পড়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতির উপর। ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ রাশিয়ার ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এতে অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানী তেলের বাজার। খাদ্য-পণ্য ও সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হতে থাকে। মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম লাগাম ছাড়া হয়ে যায়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনার শুরুতেই এই যুদ্ধ পরিস্থিতিকে গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পর থেকে বিশ্বজুড়ে চলমান বাণিজ্য সংকোচনের কারণে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে কারণ খাদ্য-পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও আমদানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে ইউক্রেন ও রাশিয়া যেসব খাদ্য-পণ্য বড় আকারে রপ্তানি করে তার মধ্যে রয়েছে-ভুট্টা, গম সূর্যমুখী তেল এবং বার্লি।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ ক্যালরি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রায় ৬৮% চালের ওপর নির্ভর করে এবং প্রায় ৭% জোগান আসে গম থেকে। দেশটিতে গমের চাহিদা গত ২০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানা যায়। ট্রেড ডাটা মনিটরের ইউএসডিএ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে তার চাহিদার ৮৭% গম আমদানি করে। এর অর্ধেক আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। এছাড়া বিশ্ববাজারে মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ গম সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু যুদ্ধের ফলে দেশ দুটি থেকে এই পণ্যটির সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় বাংলাদেশে গমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। আটা-ময়দার পাশাপাশি বেকারি পণ্যের দামও হু হু করে বেড়ে গিয়েছে।