জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিশোধে গাজায় অভিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও তা মানবে না ইসরায়েল। এমনটিই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আনাদলু এজেন্সি।
জানা যায়, স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার (২৫ মার্চ) এ প্রস্তাবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স প্লাফটর্মে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানবে না। আমরা হামাসকে ধ্বংস করতে চাই। এছাড়া আমরা আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত সেখানে হামলা চালিয়ে যাব।
এদিকে, এর আগে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পবিত্র মাস রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করে। কাউন্সিলের নির্বাচিত ১০ সদস্যের উপস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ১৪টি দেশ ভোট দিয়েছে। তবে ভোট দানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত গিলাদ এরদান দাবি করেছেন, জাতিসংঘের এই প্রস্তাব গাজা থেকে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি ‘নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে’।
প্রস্তাবে পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া সব দলকে স্থায়ীভাবে এ যুদ্ধ বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাবে ‘সমস্ত বন্দির অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার’ দাবিও করা হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ হাজার ৩৩৩ জনে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৮১৯ ফিলিস্তিনি। আর আহত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৯৩৪ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে রোববার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।