শহরের দামি জমি। সেখানে কবর দিলে জমির বিক্রয় মূল্য কমে যাবে। তাই রাস্তার পাশে কফিনবন্দি হয়ে পড়ে থাকে লাশ। ঘটনাটি বরিশালের।
জানা গেছে, শনিবার রাতে বার্ধাক্যজনিত কারণে মারা যান টিএন্ডটির সাবেক কর্মকর্তা ৭০ বছর বয়সী মাহবুবুর রহমান। মাহবুবের ইচ্ছে অনুযায়ী তার পরিবার তাকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমিতে দাফন করতে চান। কিন্তু এতে বাধা দেন তার আপন ছোট দুই ভাই ও চার বোন। মাহবুবের সন্তান ও স্ত্রীর আকুতিতেও মন গলেনি তাদের।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, বরিশালের রূপাতলীর জমিতে দাফন করা হলে সেই জায়গার কোনও বিক্রয় মূল্য থাকবে না এমন অজুহাত দিয়ে মাহবুবুরের মরদেহ দাফনে বাধা দেয় তার ভাই মঞ্জুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান সগির। মৃত্যুর আগে মাহবুবুরের শেষ ইচ্ছে ছিল নিজের বাবার ভিটায় মাটি নেওয়ার। কিন্তু তার সেই ইচ্ছে পূরণ হল না।
দাফনে বাধা দেওয়ায় রাতভর মাহবুবুর রহমানের মরদেহ রাখা হয় বাড়ির বারান্দায়। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান সগির গণমাধ্যমকে জানান, কোনও ধরনের কবর দেওয়া যাবে না নগরীর দামি জায়গায়।
অন্যদিকে, গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে বাড়ির মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন মাহবুবের মেঝো ভাই সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মঞ্জুর রহমান।
তাদের এই আচরণে এলাকায় সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সমাধানে, স্থানীয় মুসুল্লিরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হলে তিনিও সিদ্ধান্ত দেন নগরীর রূপাতলী এলাকায় মরদেহ দাফনের জন্য। কিন্তু নগরীর দামি জায়গায় দাফন করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন মোস্তাফিজুর ও মঞ্জুর। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয় এলাকাবাসীর মাঝে।
নজরুল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এসব কিসের আলামত আমার জানা নেই। ভাইয়ের কবর ভাইয়েরা দিতে দিচ্ছে না, এটা এবার জীবনে প্রথম দেখলাম। আল্লাহ এদের বিচার করবে। মানুষ কিভাবে এতটা নিচু মন মানসিকতার হয় আমার জানা নেই।
রফিক নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বেঁচে থাকতে ভাই বোনের সবার মধ্যে খুব মিল ছিল। আজ সামান্য জায়গার জন্য ভাইয়ের মরদেহ দাফন করতে দিল না তারা। এরাও তো একদিন মরবে। তাদের সন্তানরা কি শিখল। আল্লাহ এসবের বিচার করবে।
রোকন নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু নিহতের ভাই বোনেরা কোনও কিছুতেই মানেনি। হায়রে দুনিয়া নিজের কাছেই এসব ঘটনা দেখে কষ্ট লাগছে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ জানান, বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু নিহতের পরিবারের কথা নিহতের ভাই-বোনরা রাখছে না। এটা দুঃখজনক। আমার এলাকায় এর আগে কোনওদিন এমন ঘটনা ঘটেনি। জায়গা জমি দিয়ে কি হবে। কেউ কি এসব কবরে নিয়ে যেতে পারবে। ভাইয়ের সঙ্গে ভাই-বোনেরা এ কেমন আচরণ করল আমার মাথায় আসে না।
শেষমেশ বাধ্য হয়ে মাহবুবের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার তিমির কাঠি গ্রামে। পরিবারের সিদ্ধান্তে সেখানেই হয় দাফন।
সূত্র: সময় টিভি