অগ্রসর রিপোর্ট : ভারতের দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে বাংলাদেশি এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার পুলিশ। সোমবার কলকাতার নিউমার্কেটের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. নজরুল ইসলাম নামের ২৯ বছর বয়সি ওই বাংলাদেশি যুবক তার স্ত্রীর কাছে মিথ্যা বলে ধরা পড়ার ভয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভুয়া ইমেইল করে দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ান।
এতে আরও বলা হয়, ২৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লির এয়ারপোর্টের ডিউটি ম্যানেজারের কাছে একটি ইমেইল পাঠানো হয়, এতে দাবি করা হয় দিল্লি থেকে কলকাতাগামী স্পাইসজেটের একটি ফ্লাইটে একজন যাত্রী বিস্ফোরক বহন করছিল। এরপর নির্দেশিকা অনুসারে, সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি বিমানবন্দরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং উল্লিখিত ফ্লাইটের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান চালায় কর্তৃপক্ষ। পরে জানা যায়, ইমেইলটি ভুয়া ছিল।
এ ঘটনায় ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এরপরই তদন্তে নামে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা ও স্পেশাল টাস্কফোর্স।
ট্রেস করার সময়, তদন্তকালে দেখা যায়, যে ইমেইল আইডি থেকে মেইল পাঠানো হয়েছিল তা মেইল করার মাত্র এক ঘণ্টা আগে তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া কলকাতার একটি হোটেলে ইনস্টল করা একটি ওয়াই-ফাই সংযোগে সেই ইমেইলের উৎস খুঁজে পায়। মেইল পাঠানোর সময় হোটেলে ৪০ জন অতিথি ছিলেন বলে জানা গেছে। অতিথিরা সবাই হোটেলের ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেন এবং তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
তারপরে পুলিশ প্রতিটি অতিথিকে যাচাই-বাছাই করে জানতে পারে অমরদীপ কুমার নামে একজন ব্যক্তি দিল্লি থেকে সেই ফ্লাইটটি নিয়ে তার ভগ্নিপতির সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে এসেছিলেন।
এ সময় কুমার পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি সেখানে তার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, যিনি প্রায় এক মাস ধরে হোটেলে ছিলেন।
এরপর পুলিশ নজরুল ইসলামের ফোন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় তার ফোন থেকে প্রতারণামূলক মেইলটি পাঠানো হয়েছিল।
দিল্লি পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ভুয়া ইমেইল পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার কাজে যুক্ত রয়েছেন তিনি এমন মিথ্যা কথা বলে ২০২৩ সালে সোনিয়া নামের ভারতের নয়াদিল্লির এক নারীকে বিয়ে করেন। পাঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় ওই নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় তার। মাস্টার্স শেষে ২০২০ সালে নজরুল বাংলাদেশে ফিরে গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ ছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বিয়েও করেন তারা।
বিয়ের পর থেকে নজরুলের স্ত্রী সোনিয়া তাকে বারবার যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে শুরু করেন নজরুল। এমনকি স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন দিল্লিতে চলমান কৃষক আন্দোলনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারছেন না, কলকাতায় আটকে পড়েছেন। এতেই সন্দেহ হয় সোনিয়ার। গত ২৭ তারিখ সোনিয়া তার ভাই অমর দীপ কুমারকে কলকাতায় নজরুলের সত্যতা যাচাই করতে পাঠান।
তবে বিষয়টি আগেভাগেই জেনে যায় নজরুল। শ্যালককে দিল্লি বিমানবন্দরেই আটকে দিতে দিল্লি থেকে কলকাতাগামী স্পাইসজেটের ফ্লাইটে এক যাত্রী বোমা বহন করছেন বলে দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ভুয়া ইমেইল পাঠান নজরুল।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, নজরুল বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রতারণা করে কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। নজরুলের পাসপোর্ট, ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।