ফরিদপুর প্রতিনিধি: সাদামাটা গৃহিনী হয়েও অসীম সাহস জুগিয়ে আর সময়োচিত পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা চিরস্মরণের সঙ্গে সবসময় অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন আরিফুর রহমান দোলন।
কৃষক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা টাইমস সম্পাদক দোলন ‘চিরস্মরণীয়-অনুকরণীয় বঙ্গমাতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে একথা বলেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা মালল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমাজসেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন।
দোলন বলেন, ‘বঙ্গমাতা ছিলেন সাধারণের বেশে অসাধারণ এক নারী। সাদামাটা গৃহিনী হয়েও বাংলাদেশের ইতিহাসে রেখেছিলেন অনেক বড় ভূমিকা। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। বঙ্গমাতার ছিল অসীম সাহস, অপরিসীম ধৈর্য, সীমাহীন আন্তরিকতা আর আকাশচুম্বী উদারতা।’
‘তিনি একদিকে শক্ত হাতে ধরেছেন সংসারের হাল। আরেকদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতিহাস নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছেন।’
৭ই মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ঢাকা টাইমস সম্পাদক দোলন বলেন, ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পদের স্বীকৃতি পাওয়া ওই ভাষণের নেপথ্যেও ভূমিকা রেখেছিলেন বেগম মুজিব। সেদিন তাঁরই পরামর্শে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে জনতার মঞ্চে বঙ্গবন্ধু সেই অমর কবিতাখানি শোনান—এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
‘পৃথিবীতে এরকম কঠিন সময়ে এরচেয়ে রাজনৈতিকভাবে সঠিক কোনো ভাষণ আর কেউ কোথাও দিয়েছে বলে মনে হয় না। এর পেছনে ছিলেন সেই মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।’
রাজনীতিতে সদাব্যস্ত জাতির পিতার অবর্তমানে কিভাবে পরিবার সামলাতেন, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেন দোলন। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুঅধিকাংশ সময় জেলেই কাটিয়েছেন। ছেলে-মেয়ে-সংসার সব একহাতে সামলেছেন বেগম মুজিব। ছেলেমেয়েদের সুরুচি গড়ে উঠেছে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা থেকেই।’
‘বেগম মুজিবকে খুব অল্প বয়সে জীবনসংগ্রামে নেমে পড়তে হয়েছিল। সব সমালেছেন, কিন্তু কারোর কাছে মাথানত করেননি। নিজের ব্যক্তিত্ব ঠিক রেখে সীমাহীন প্রজ্ঞা ধৈর্যের সঙ্গে একে একে সব উৎরে নিয়েছেন। তাঁ মধ্যে বাংলার নারীর স্নিগ্ধ রূপ যেমন দেখতে পাই, তেমনি রাজনৈতিক প্রশ্নে তিনি ছিলেন অপিরিসীম দৃঢ় আর দূরদর্শী।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘাতকেরা নির্মমভাবে বঙ্গমাতাকেও হত্যা করে। জঘন্য সেই হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে দোলন বলেন, ‘সেদিন তাঁকে হত্যা করায় নারী জাগরণ কিছুটা হলেও ক্ষণিকের জন্যে থমকে যায়। চিরস্মরণীয় ও অনুকরণীয় সেই মহিয়সী নারীকে বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনের ওপর অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল আলীম সুজা, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনিরুল হক শিকদার, আলফাডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রউফ তালুকদার, আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম মুজিবুর রহমান, কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।