এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ‘এই আদেশের মধ্য দিয়ে আইনগত প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটল। এখন মৃত্যুদন্ড কার্যকরে আইনগত কোন বাঁধা থাকল না।’
উভয় মামলার আসামী ও সরকারী কৌসুলীদের শুনানী শেষে আপীল বিভাগের চার সদস্যের একটি প্যানেল এই যৌথ আদেশ দেন। প্যানেলের নেতৃত্ব দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ‘ডিসমিসড’ বলে সংক্ষিপ্ত এই আদেশ দেন।
এ্যাটর্নী জেনারেল তার অফিসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমি খুব খুশি। এই আদেশ জাতির প্রত্যাশা পূরণ করেছে।’
সুপ্রীম কোর্ট আজ আদেশ দেবেন বলে গতকাল সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল মুজাহিদের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন।
অন্যদিকে এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়ক শক্তি আল-বদরের নেতা হিসাবে মুজাহিদের ঘৃণ্য ভূমিকা তুলে ধরেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে তার মদদ ছিল।
আজ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপীলের শুনানীকালে তার কৌসুলী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি (সালাহউদ্দিন) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন না। তার যুক্তির সপক্ষে তিনি দু’টি দলিল আদালতে উপস্থাপন করেন। এর একটি ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের একটি কথিত চিঠি।
তার কৌসুলী যুক্তি দেখান যে, ১৯৭১ সালে বিএনপি নেতা ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। কিন্তু এ্যাটর্নী জেনারেল এই যুক্তি খন্ডন করে বলেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার সিস্টেম ছিল না। যেহেতু সেমিস্টার ছিল না, সেহেতু ক্রেডিট ট্রান্সফারও ছিল না।
আদালতও এসব দলিল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ২০১২ সালে দলিলগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যু করা হলে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে মামলার শুনানীকালে সালাহউদ্দিন কাদের তার আদালতে প্রদর্শন করেননি কেন।
এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ওইসব দলিল পাকিস্তানের নোটারী পাবলিক দ্বারা সার্টিফাইড না, তাতে সেদেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন কর্মকর্তার কোন কাউন্টার স্বাক্ষরও নেই।’
কৌসুলী তুরিন আফরোজ এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে এর প্রশংসা করেছেন। তিনি দু’টি মামলারই আইনী যুক্তি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘দু’টি মামলারই আইনগত যুক্তি উপস্থাপন করায় আমি খুবই খুশি। দু’টি রায়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি একটি অর্জনের দিন। স্বাধীন বিচার বিভাগ থেকে এটি একটি নিরপেক্ষ রায়।’
অন্যদিকে আসামী পক্ষের প্রধান কৌসুলী খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা আইনী লড়াই করেছি এবং পরাজিত হয়েছি। আপীল বিভাগ আদেশ দিয়েছেন। এখন যুক্তির আর কোন সুযোগ নেই।’
আজ আদালতে সালাহউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সদস্যকে আদালত প্রাঙ্গণে দেখা যায়নি। তবে আসামী পক্ষের কৌসুলীদের পাশে মুজাহিদের পুত্র আলী আহমেদ মাবরুরকে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, তারা কারাগারে শিগগিরই তার পিতার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন এবং ক্ষমা ভিক্ষার ব্যাপারে তার পিতাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে কোন কোন সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুজাহিদের ভাই এবং ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমীর আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেস জানিয়েছেন, তার ভাই প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাইবেন না।
কোন অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের পর এই দু’জনকে ফাঁসি দেয়া হবে। প্রথম দু’জনের মধ্যে রিভিউ প্রত্যাখ্যানের এক সপ্তাহের মধ্যে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি এই সাজার বিরুদ্ধে আপীল করেন। ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই আপীল বিভাগ মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন।
১৪ অক্টোবর সালাহউদ্দিন রায় পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করেন। সুপ্রীম কোর্ট তার আবেদন খারিজ করে দেন।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আইসিটি-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট তিনি সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন।
২০১৫ সালের ১৬ জুন আপীল বিভাগ তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন।
সালাহউদ্দিন ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল
স্টাফ রিপোর্টার: মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ চূড়ান্ত আইনী লড়াইয়ে হেরে গেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাদের মৃত্যুদন্ডের রায় পুনঃবিবেচনা করতে আপীল বিভাগে তারা যে আবেদন করেছিলেন, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ তাদের দু’টি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন।