অগ্রসর রিপোর্ট :হানিফ পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও চালককে হত্যায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসব ডাকাত উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করত। তারা যাত্রীবেশে বাসে উঠে অন্য যাত্রীদের মালামাল লুট করত।
রোববার (৫ সেপ্টম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাহিনীর মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) র্যাব-১ ও ১৩ এর আভিযানিক দল ঢাকার আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের নেতা নয়ন চন্দ্র রায়, মো. রিয়াজুল ইসলাম লালু, মো. ওমর ফারুক (১৯), মো. ফিরোজ কবির, আবু সাঈদ মোল্লা এবং শাকিল মিয়াকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ পাঁচটি ছুরি, লুটকৃত একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, ৩১ আগস্ট রাতে হানিফ পরিবহনের একটি নন-এসি বাস (ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-৩৮১০) ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে যাচ্ছিল। বাসটি রাত আনুমানিক আড়াইটায় সাভারে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই ডাকাতরা যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। বাসটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড় অতিক্রম করার পর বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতদলের সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রথমে বাসের চালক মনজুর হোসেনকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় চালক বাসটি ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা আবার চালকের কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ডাকাতদলের সদস্য লালু বাসটি চালাতে থাকে এবং দলের অন্য সদস্যরা বাসে লুটপাট করতে থাকে। বাসটি রংপুরের শটিবাড়ীস্থ ভাবনা ফিলিং স্টেশনে ইউটার্ন করে পুনরায় উল্টো পথে রওয়ানা করে। পলাশবাড়ী পৌঁছানোর আগে ডাকাতরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ হাই স্কুলের সামনে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে যাত্রীসহ বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা যাত্রীদের মুঠোফোন এবং নগদ ৩০-৪০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত বাসচালককে নিকটস্থ পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খন্দকার মঈন আরও জানান, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গগামী বাসে ডাকাতি করছিল। তারা গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৭-৮টি বাসে ডাকাতি করেছে। পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার রাস্তায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি, ১২ জানুয়ারি সৈকত পরিবহন, ৮ মার্চ, ৪ এপ্রিল এবং ১৯ আগস্ট বাসে ডাকাতি করেছে বলে স্বীকার করেছে তারা। ওই ডাকাতরা সাধারণত পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জ মহাসড়কের নির্জন এলাকা ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। ডাকাতির পর তারা আশুলিয়ায় ফিরে আসে। নয়ন চন্দ্র রায় চক্রের মূল হোতা। চক্রের সদস্যরা আশুলিয়ায় বিভিন্ন পোশাক কারখানায় খণ্ডকালীন চাকরি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গাড়ি চালানো ইত্যাদি পেশায় জড়িত। শাকিলসহ আরও কয়েকজন গাইবান্ধায় বিভিন্ন পেশায় জড়িত। লালু ট্রাকচালক। সে তার অন্য সহযোগীদের সঙ্গে বাস ডাকাতির সময় বাসের চালকের পরিবর্তে নিজে বাস চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেত।