অগ্রসর রিপোর্ট :করোনাভাইরাসের সংক্রম ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে শর্ত সাপেক্ষে ১ আগস্ট থেকে উৎপাদনমুখী সব শিল্প কল-কারখানা খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। শ্রম অঞ্চলের আশপাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে কারখানার কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছেন মালিকরা। আর যারা গ্রামে অবস্থান করছেন, যাতায়ত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর কর্মে যোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এই সময়ে কোন শ্রমিকদের চাকরি হারাবে না বলেও নিশ্চয়তা দিচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে মালিকদের বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
এক দিনের ব্যবধানে কারখানা খোলার ঘোষণায় শ্রমিকদের বিপাকে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করছেন শ্রমিক নেতারা। তাদের মতে, চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ঝুঁকি নিয়েও কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরছেন লাখ লাখ শ্রমিক।
এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান কর্মসংস্থান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- যাতায়ত সমস্যা সাভাবিক হওয়া পর্যন্ত কোন শ্রমিক চাকুরি হারাবে না। যদি কোন শ্রমিকের চাকরি চলে যায়, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৩টি, বিকেএমইএ’র ৮১৬টি, বিটিএমএ’র ৩১০টি বেপজা’র ৩৬৯টি এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৫৪টি কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে ৪৪ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত আছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশ নারী।
চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে মালিকদের বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই দুর্যোগ মুহূর্তে কোন শ্রমিক ছাঁটাই এবং কোন প্রকার শিল্প-কলকারখানা লে-অফ ঘোষণা না করতে মালিকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
করোনা মহামারী শুধু বাংলাদেশ নয় ,সারা বিশ্বের জন্য দুযোর্গ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সবাই মিলে একসাথে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারনে ঈদে অনেক শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে যায়নি। অনেক শ্রমিক কারখানার পাশেই থাকে। অনেক শ্রমিক স্থানীয়। এছাড়া ঢাকাঞ্চলে সিটির মধ্যে কারখানা কম। ঢাকার বাইরে অনেক বেশি। যে জন্য স্থানীয় জনগণের শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আগেও বলে দিয়েছি, এখন আবার বলছি- আমাদের অনেক শ্রমিক স্থানীয়, যারা কারখানার পাশে থাকে। অনেকে বাড়িতে যায়নি, আর যারা গিয়েছেন তাদের অনেকেই ফিরেও আসছেন। এখনো কিছু শ্রমিক রয়েছে, যারা বাড়ি থেকে আসতে পারেন নি। যখন যানবাহন চলাচল শুরু হবে তখন তারা আসবেন। তখন তারা কাজে যোগ দেবেন। এই বিলম্বে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না।
ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘সাধারণত ঈদের ছুটি ৩দিন, এর সঙ্গে মালিকদের আরও ৩দিন দিয়ে থাকেন। অনেকে এর থেকে বেশি ১০ দিন পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এর পরেও ঈদ শেষে যখন শ্রমিকরা আসেন তখন ৪০ শতাংশ উপস্থিতি থাকে। কারখানা সম্পূর্ণ খোলা থাকলেও সব শ্রমিকরা উপস্থিত হতে পারেন না। পর্যায়ক্রমে উপস্থিতি বাড়ে। এজন্য আমরা চাচ্ছি, যতটুকু উপস্থিতি হবে তা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করবো। এভাবে পর্যায়ক্রমে লোক আসবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এলে কারখানার সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, ‘বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সব মালিকদের বলা হয়েছে- যাতায়ত সমস্যার কারনে কোন শ্রমিক আসতে না পারলে কারো চাকরি যাতে না যায়। যদি কোন শ্রমিকের চাকরি যায়, তার তালিকা বিজিএমইএতে পাঠালে- তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এই নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি।’
শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কারখানা চালুর প্রেক্ষিতে মালিকরা ঢাকার ভিতরে ও কারখানা কম্পাউন্ডের ভিতরের শ্রমিকদের দিয়ে কেবল কাজ করানো হবে বলে জানালেও প্রকৃতপক্ষে কারখানা কর্তৃপক্ষ থেকে সব শ্রমিকদের কারখানায় ফিরতে বাধ্য করছে। ১ আগস্টের মধ্যে কারখানায় যোগদান না করলে শ্রমিকদের চাকরির হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
পরিবহন ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত না করে শিল্প কারখানা চালু করার মত সরকার ও মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্মম শোষণ-নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সকল শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত হওয়ার আহবান জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি রাইজিংবিডিকে জানান, যাতায়ত ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যেসব শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে আসতে পারবে না। তাদের বেতন কাটা যাবে না এবং ছাঁটাই করা যাবে না। এ বিষয়টি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে সব শ্রমিক সংগঠন। যদি শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয় তাহলে মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে শ্রমিক ও সংগঠনে নেতৃবৃন্দ। এর দায় দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে।