অগ্রসর রিপোর্ট : কাজের জন্য যুবকদের বিদেশে যাওয়ার দরকার হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের যুবকদের বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই। যুবসমাজের জন্য আমাদের দেশেই বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। মৎস্য ও চাষাবাদে উন্নতি ঘটেছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষিতে শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে কাউকে বিদেশে যেতে হবে না। বিদেশে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে হবে না। রোববার (১ নভেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০ এর আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিদেশে সোনার হরিণ খুঁজতে গিয়ে সব হারানোর দরকার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিদেশে পাঠানোর জন্য আমাদের ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কোথায় চাকরি পাওয়া যাবে বা কোথাও প্রতারণা হচ্ছে কি না, তার খবর নেয়ার ব্যবস্থাও আছে। তাই সোনার হরিণ খুঁজতে গিয়ে সব হারানোর দরকার নেই। সবকিছু খবর নিয়েই বিদেশে যাওয়া উচিত।’
মেধা প্রয়োগের এ সময়টা কাজে লাগাতে হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যুবসমাজ চাকরির পেছনে ছুটবে না, চাকরি দেবে। সেই মনমানসিকতা সবার থাকতে হবে। নিজেকে উদ্যোক্তা হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে অন্যের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা যায়। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের দেশটা যেন আত্মনির্ভশীল ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়। যুবসমাজকে আহ্বান করব- এখন কাজ করার বয়স, মেধা প্রয়োগের বয়স। তাই এ সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।’
বিভিন্ন কারিগরি ইনস্টিটিউট করছি
তিনি আরো বলেন, যুবসমাজের জন্য বিভিন্ন কারিগরি ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি। যাতে তারা লেখাপড়া করে দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। যুবকরা যাতে কাজ করতে পারে, তাদের যাতে পরমুখী হতে না হয়, সে জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে যুবসমাজের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। ৯৬-২০০১ সাল ক্ষমতায় থাকাকালে কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি। যুবসমাজ যেন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রবাসী ব্যাংক করে দিয়েছি। বেসরকারি খাতে হাসপাতাল তৈরির ব্যবস্থা করেছি। ব্যাংক-বিমা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যত বেশি প্রতিষ্ঠান হবে, তত বেশি বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যুবসমাজের মধ্যে যে মেধা-মনন আছে, সেটা কাজ লাগাতে হবে। পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে ছোটাছুটি না করে, নিজেই যাতে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কাজের ব্যবস্থা করতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। কাজের জন্য মূলধন যেটা লাগে তার জন্য আমরা বাজেটে আলাদা টাকাও রেখেছি। সেটা যদি কারো প্রয়োজন হয়, সেটা কাজে লাগাতে পারবে। যুবসমাজকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার করেছি। এখন গ্রামের মানুষও বিদেশে কাজ করতে পারে। অর্থ অর্জনও করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সারদের সনদ দেয়ার চিন্তা চলছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। এর মাধ্যমে গ্রাম থেকেও কাজ করতে পারছে অনেকে। তবে ফ্রিল্যান্সারদের একটু অসুবিধা হচ্ছে। যেহেতু এতে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে না, সার্টিফিকেট বা কোনো সনদ নাই। তাই ফ্রিল্যান্সারদের সনদ দেয়ার বিষয়ে চিন্তা চলছে। তিনি বলেন, অনেক সময় কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনি কী করেন, তখন যদি বলে ফ্রিল্যান্সার, তখন অনেকে বুঝতেই পারে না জিনিসটা কী। তারা মাসে ২-৩ লাখ টাকা কামাই করছে, কিন্তু তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই। সেটা নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি। যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ও তাদের স্বীকৃতি বা সনদের বিষয়ে চিন্তা করছে। যাতে করে ফ্রিল্যান্সারদের একটা নিশ্চিত জায়গা তৈরি করে দেয়া যায়।
গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন সরকারের নীতি
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের সরকারের একটা নীতিমালা রয়েছে। আমরা রাজনীতিভিত্তিক উন্নয়ন করি না, গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন করি। গ্রামের সবাই যেন শহরের সব সুবিধা পায়। উন্নয়নটা সব জায়গায় সমানভাবে হবে। এ জন্য ব্যাপকভাবে রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আগামী ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী করব। তখন আমরা প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারব।
মাদক, দুর্নীতি, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে
শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো কাজেরই মর্যাদা আছে। ফসলের মাঠে কাজ করলে মর্যাদাহানি হয় না। নিজের কাজ নিজে করতে লজ্জা নেই। তবে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ- এ ধরনের কাজে যেন সম্পৃক্ততা না থাকে। মাদক, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থাকতে হবে সবাইকে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে সব কাজে সৎ থাকতে হবে।
করোনা নিয়ে কেউ যাতে দেশে আসতে না পারে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক দেশে দ্বিতীয় ধাপে করোনা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও এর প্রভাব আবারো পড়তে পারে। তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। প্রতিটা পোর্টে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে কেউ করোনা নিয়ে আবার দেশে আসতে না পারে। দেশের কথা চিন্তা করেই এ কাজটা করতে হচ্ছে।’