অগ্রসর রিপোর্ট : স্বাস্থ্যখাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে। অভিযান চলবে অনিয়মের আবর্তে থাকা অন্যান্য খাতেও। কেউই জবাবদিহিতার উর্ধে নয়, দলীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম ঢাকা যাবেনা।’
আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা জনগনের মনের ভাষা বুঝেন, তাঁর কাছে কোন অপরাধির ছাড় নেই। আসুন আমরা নিজের বিবেকের কাছে নিজে পরিশুদ্ধ থাকি, জবাবদিহি করি। অসহায় মানুষের হক নষ্ট না করে তাদের পাশে দাঁড়্ইা। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার করাবন্দি হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের আস্থার প্রতীক শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের এই দিনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বরকে অবরুদ্ধ করেছিল। তিনি ১১ মাস কারাবন্দি ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের ১০ জুন তিনি কারা মুক্ত হন।’
তিনি বলেন, ‘পিতা মুজিবের পথ অনুসরণ করে মানুষের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত মানুষের আশার প্রদীপ শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং দেশকে সমৃদ্ধির সোপানের শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে তাঁর নিরলস প্রয়াস আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, সমাদৃত। বারবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা মৃত্যুঞ্জয়ী বীর ধ্বংস্তূপের পাশ থেকে যিনি সৃষ্টির পতাকা উড়ান, সঙ্কটকে রূপদেন অসীম সম্ভাবনায়।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেদিন শেখ হাসিনাকে বন্দি করে যারা রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, রাজনীতিবিদদের হাত থেকে জনমানুষের মুক্তির লড়াই রূদ্ধ করতে চেয়েছিল, এগার মাসে তারা বুঝে নিয়েছিল মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে বরং বন্দী শেখ হাসিনা অধিক শক্তিশালী ছিলো।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের বিজয় প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা তাকে পরবর্তী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীত্বের মুকুট পরিয়ে দেয়। এরপর থেকে চলছে ভিন্ন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণে লড়াই। বাঙালির দৃষ্টিসীমা আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে নিয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সীমিত সীমানার পরিধি বাড়িয়ে যুক্ত করেছে সাগরে নীলাভ সম্ভাবনা। বহু বছরের অমীমাংসিত সিটমহল সমস্যার সমাধান করেছেন। সীমান্ত সমস্যার সমাধান করেছেন কূটনীতিক দক্ষতায়। দারিদ্র বিমোচনসহ বদলে দিয়েছে দেশের চিরচেনা দৃশ্যপট।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে শেখ হাসিনার সৃষ্টিশীল নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু এনে দিয়েছেন ভৌগলিক মুক্তি, স্বাধীনতার অপূর্ণ সাধ আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই দেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১/১১তেও শেখ হাসিনা কারাবন্দী থাকা অবস্থাতে তার সেই মন মানসিকতার চিন্তা সবকিছুতে বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের সবাই মিলে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনপণ লড়াই করেছেন।
এক-এগারোর সরকারের সময়কার সেই আন্দোলন-সংগ্রামে এবং নেত্রীর কারামুক্তি আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন তিনি আরও বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা অনেক ষড়যন্ত্র ভেদ করে ক্ষমতায় আছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবসের পটভূমির কথা স্মরণ করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে সেদিন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। গণতন্ত্রকে বন্দি করার হীন উদ্দেশ্যে প্রকৃতপক্ষে সেদিন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারণ যাদের দুর্নীতি-দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল সেই খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এক/এগারোর সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন গণতন্ত্রের অগ্নিবীণা। তার ধমনী শিরায় বঙ্গবন্ধু রক্ত প্রবাহমান।তিনি কোন আপোষ জানেন না। সেই কারণেই তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে যেমন কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা জনগনের পাশে দাঁড়ায়নি। তারা হারিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা দেশে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয় তখনই তারা ছোবল দেয়ার অপচেষ্টা দেখায়। বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে কিভাবে গণতন্ত্রকে আবারো নস্যাৎ করা যায় সেই চেষ্টা তারা এখনও অব্যাহত রেখেছে।
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহা উদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও এসএম কামাল হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।