অগ্রসর রিপোর্ট : মহান বিজয় দিবসে একাত্তরের বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে বাঙালি জাতি। সর্বস্তরের জনতার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীন দেশ, সেইসব শহীদদের স্মরণে সোমবার প্রথম প্রহরেই জেগে উঠে স্মৃতিসৌধ এলাকা।
বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নানা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ কুয়াশা ও ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকেই হাজির হয়েছেন সেখানে। অনেকে এসেছেন রাতেই। আসেন অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাও। সবার চোখে-মুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা বিনির্মাণের অবিচল আস্থার ছাপ। বিজয় দিবসের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে।
বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। এছাড়া স্মৃতিসৌধ এলাকা থেকে অনবরত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দেশাত্মবোধক গান শোনা যাচ্ছে। লাখো মানুষের আগমনে স্মৃতিসৌধ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে।
ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন এলাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে স্মৃতিসৌধে এসেছেন সুলতানা। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার এই বাসিন্দা বলেন, ‘স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধ শুধু বইয়ে পড়েছি। কখনো আসা হয়নি। তাই ছুটি পেয়ে স্বামীর সঙ্গে ভোরেই চলে এসেছি শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। এখানে এসে অনেকটা আপ্লুত হয়ে গেছি।’
বাবা-মায়ের সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছেন দুই শিশু সাঈদ ও আফরিন। আফরিন জানায়, ‘শহীদদের ফুল দিতে শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মা-বাবার সঙ্গে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে।’ পাশে থাকা সাঈদ বলে, সারাদিন স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখে অনেক মজা করবো।
স্মৃতিসৌধে সবাই যে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন এমন নয়। জীবিকার তাগিদেও কেউ কেউ ছুটে এসেছেন স্মৃতিসৌধে।
পতাকা বিক্রি করতে স্মৃতিসৌধে এসেছেন আসগর। তিনি বলেন, অন্যরা ফুল দিতে স্মৃতিসৌধে এলেও তিনি এসেছেন পতাকা বিক্রি করতে। তবে নিজে শ্রদ্ধা জানাতে না পারলেও সবাই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এটা দেখে তিনি তৃপ্তি পাচ্ছেন।
রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি দলে দলে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। এসময় যেন পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
এর আগে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবসের কর্মসূচি। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে তাদের চলে যাওয়ার পর স্মৃতিসৌধ এলাকা সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গণে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদদের স্মৃতির মিনার।